কক্সবাজারের রামু উপজেলার প্রাচীনতম বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারে দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রামুতে কঠিন চীবর দানের সমাপ্তি হলো। বৌদ্ধরা তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে এক মাস ব্যাপী প্রত্যেক বৌদ্ধ বিহারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কঠিন চীবর দান করে থাকে। এ ধারা বাহিকতায় রামু উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারে গতকাল রবিবার (১৩ নভেম্বর) দিন ব্যাপী ধর্মীয় কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে এ বছরের কঠিন চীবর দান সম্পন্ন হলো।
দিনব্যাপি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের। তিনি বলেন, সব পাপ, অপকর্ম, লোভ, দ্বেষ, অহংকার ত্যাগ করে সৎ ও পুণ্যকর্মে ব্রত হলে মানুষ ইহকাল ও পরকালে পরম সুখ ও শান্তি লাভ করতে সক্ষম হয়। তিনি বিশ্বের সব জাতিগোষ্ঠী ও প্রাাণির সুখ, শান্তি ও হিত-মঙ্গলের জন্য সবাইকে বুদ্ধের অহিংস পরমনীতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের উত্তরোত্তর স্বমৃদ্ধি কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষ যখন সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাস করছে, ঠিক তখনই স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা দেশের সম্প্রীতিবদ্ধ এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাত করে দেশের উন্নয়নকে বাধাঁগ্রস্থ করার অপচেষ্টা চালায়। এ অপশক্তি ২০১২ সালে রামুতেও আঘাত করে আমাদের হাজার বছরের সম্প্রীতির বন্ধনে ফাটল ধরার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব ও শক্ত অবস্থানের ফলে সম্প্রীতিবদ্ধ রামুবাসি আজ নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রামুতেকেও স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলের নেতৃত্বে উন্নয়নে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম সর্বস্তরের মানুষের সহযোগীতা কামনা করেন। তিনি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের উন্নয়নে তাঁর সার্বিক সহযোগিতা অব্যহত থাকবে বলে ঘোষনা দেন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রধান জ্ঞাতি ছিলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ঘাটচেক ধর্মাদুত বিহারের অধ্যক্ষ বিজয় রক্ষিত মহাথের, প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন বাশঁখালী শিলকুপ চৈত্যবিহারের অধ্যক্ষ আর্যমিত্র মহাথের, বিশেষ ধর্মদেশক ছিলেন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ প্রিয়রতœ মহাথের। ধর্ম সভায় স্বাগত দেশনা করেন প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ সারমিত্র মহাথের, শুভেচ্ছা দেশনা করেন বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও একশ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমুর্তির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ করুনাশ্রী থের। এতে রামু শ্রীকুল পুরাতন বিহারের অধ্যক্ষ চেকাচারা মহাথের, পূর্বদ্বীপ শ্রীকুল সংঘরতœ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ পাঞাওয়ারা মহাথের, কুমিল্লা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষসহ শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রামু থানার অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধর, রামু কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হক, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যাপক ঝন্টু বড়–য়া, ঢাকা পল্টন মডেল থানার এস আই সুমন বড়–য়া। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রিন্স। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়–য়া, জোয়ারিয়ানালা ২নং ওয়ার্ড়ের মেম্বার নুরুল ইসলাম, ১নং ওয়ার্ড়ের মেম্বার আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, ব্যবসায়ি সুদীপ্ত ভূষন বড়–য়া কোম্পানী, যুবলীগনেতা নবিউল হক আরকান, মাসুদুর রহমান, ওসমান গণি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর সঞ্চালনায় ও প্রজ্ঞাপাল ভিক্ষুর মঙ্গলাচরণের মাধমে অনুষ্ঠিত আয়োজনের শুরুতে এতদাঞ্চলের প্রয়াত সংঘমনিষা প্রজ্ঞামিত্র মহাথের নির্বাণসুখ প্রার্থনায় তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি শ্রদ্ধা করেন প্রয়াত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের’র প্রধান শিষ্য সারমিত্র মহাথের’র নেতৃত্বে উত্তর মিঠাছড়ি গ্রামবাসিরা। এছাড়া ভোরে হাজারো পূণ্যার্থীর বুদ্ধপুজা সহকারে গ্রাম প্রদক্ষিন, বিকালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিদেয় বস্ত্র চীবর ও কল্পতরু সহকারে শোভাযাত্রা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, চীবর ও কল্পতরু উৎসর্গ, ভিক্ষু সংঘের ধর্মদেশনা, সন্ধ্যায় বাংলাদেশসহ বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রদীপ পুজা ও ফানুস উত্তোলন, রাতে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপি কর্মসুচী পালিত হয়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।