এম.জিয়াবুল হক,(চকরিয়া): প্রতিবছরের মতো এবারও উৎসবের আমেজে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে প্রতিমা বির্জসন দেয়া হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বির্জসনকে ঘিরে গতকাল শনিবার চকরিয়া শহরের চিরিঙ্গা ব্রীজ পয়েন্টের মাতামুহুরী নদীর চরের বিশাল এলাকাটি হাজারো নারী-পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
প্রতিমা বির্জসন উপলক্ষে গতকাল দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা চারঘন্টা ধরে নদীর চরে ঢল নামে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পুজা মন্ডপ থেকে ট্রাকে করে একের পর এক আসতে থাকে প্রতিমা গুলো। বিকাল চারটার পর নদীর তীর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এরপর বিকাল পাঁচটার দিকে নদীতে প্রতিমা বির্সজনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে শারদীয়া দুর্গোৎসবের। উৎসবটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে একসময় অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব। এতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নিয়ে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে করে। এভাবেই গতকাল উপজেলায় সমাপ্ত হয়েছে শারদীয়া দুর্গোৎসব।
মাতামুহুরী নদীর চরে অনুষ্ঠিত প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম। তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবটি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় একটি অনুষ্ঠান হলেও আজ এটি একটি ধর্মের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মাতামুহুরীর চরে উপস্থিতি প্রমাণ করে উৎসবটি সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের। আওয়ামীলীগ সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ^াসী। এই কারনে সরকার সকল ধর্মের মানুষের মাঝে ধর্মীয় উৎসব পালন ও স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে কাজ করছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কারন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সরকার প্রধান বলেছেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে সরকার সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে সফলও হয়েছে। তিনি বলেন, মাতামুহুরী নদীর তীরের এই উৎসব আগামীতে আরো ব্যাপকতা পেয়ে মহামিলন মেলায় পরিণত হবে। সেই জন্য উপজেলা প্রশাসন ও আমার ব্যক্তিগত তরফ থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা প্রতিমা বিসর্জন কমিটির সভাপতি প্রদীপ কান্তি দাশের সভাপতিত্বে দুপুরে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মো.আলমগীর চৌধুরী। বির্জসন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুনীল বিহারি নাথের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মোকতার আহমদ চৌধুরী, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, উপজেলা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি ডা.তেজেন্দ্র লাল দে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ, চকরিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম, উপজেলা শ্রমিকলীগের আহবায়ক জামাল উদ্দিন, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বাবু ধনরঞ্জন দাশ, হারাধন দাশ, নন্দরাম ধর, অধ্যাপক সুজন কান্তি নাথ, চকরিয়া পৌরসভা পুজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি সুজিত দাশ প্রমুখ।
প্রতিমা বিসর্জনের পূর্বে চট্টগ্রামের সংগীত শিল্পীরা মঞ্চে গান পরিবেশন করেন। ওইসময় গানের ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে নদীর তীরে নেচে আনন্দ উল্লাস করে পুজারী হাজারো নারী-পুরুষ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।