আগামী মার্চ মাসে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দিতে পারে বিএনপি। সরকার এ প্রস্তাব আমলে না নিলে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি রাজপথে আন্দোলনে নামবে। বিতর্ক এড়াতে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন প্রস্তাবে তা স্পষ্ট নাও করা হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হতে পারে। এসবের পাশাপাশি একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীর তালিকাও চূড়ান্ত করে রাখবে দলটি।
সম্প্রতি এ নিয়ে দলের হাইকমান্ড কয়েক নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। হাইকমান্ডের মতে, শেষ পর্যন্ত সরকার যদি বিএনপির প্রস্তাব আমলে নেয়, তখন যাতে প্রার্থী বাছাইয়ে তাড়াহুড়ো করতে না হয় সেজন্যই তালিকা তৈরি রাখা হবে। দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমাদের একটিই দাবি- তা হচ্ছে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সে লক্ষ্যে আমাদের নেত্রী একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার যদি আমাদের প্রস্তাবকে আমলে না নেয়, তাহলে বুঝতে আর বাকি থাকবে না ওই নির্বাচন কেমন হবে। নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত- সরকারের এমন ফাঁদে আমরা আর পা দেব না। আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মার্কা আরেকটা নির্বাচন করতে দেব না। আমাদের প্রস্তাব গৃহীত না হলে রাজপথে আন্দোলনে নামব। সরকারবিরোধী যেসব রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে তাদের সঙ্গে যুগপৎ বা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করব।
জানা গেছে, বিএনপি আগামী মাসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েই খালেদা জিয়া বসে থাকবেন না। তার প্রস্তাবের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করবেন। এছাড়া জনগণকে প্রস্তাবের পক্ষে সংগঠিত করতে দল থেকে প্যাকেজ কর্মসূচিও নেয়ার কথা ভাবছেন হাইকমান্ড। ইতিমধ্যেই নির্বাচন ও সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের পক্ষে বিএনপি কূটনৈতিক পর্যায়েও যোগাযোগ বাড়িয়েছে।
দলের কূটনৈতিক সেলের সদস্যরা প্রতিনিয়ত বিএনপির ভাবনা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় করছেন। এরই অংশ হিসেবে আজ বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্ল–ম বার্নিকাট। পর্যায়ক্রমে ঢাকায় নিযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের দাবিটা কঠিন নয়। আমরা চাই, সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোর করে নানা কৌশলে ক্ষমতায় থাকতে চায়। সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য যে কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপিকে তো পাল্টা কৌশল গ্রহণ করে এগোতে হবে। আগামী দিনে কী ধরনের কৌশল বিএনপিকে নিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এতটুকু বলতে পারি, বিএনপি বসে থাকবে না।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন যে সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবেন তার একটা খসড়া তৈরি হয়েছে। সেখানে একাধিক প্রস্তাবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় টেকনোক্রেট কোটায় অবিতর্কিত, দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য কাউকে দায়িত্বে রাখার বিষয়টি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এরাই প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখভালের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন। পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রয়োজনে রদবদল করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। সেক্ষেত্রে সরকার যদি আলোচনায় বসে তাহলে বড় ধরনের ছাড় দেয়ার মানসিকতা আমাদের রয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি এ লক্ষ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছেন। এছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগরের সিনিয়র নেতা এবং দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। বৈঠকগুলোতে খালেদা জিয়া বলেছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে এই সরকার আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সে কারণেই বিএনপি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। এটা করতে হলে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার প্রয়োজন। এ ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। কাজেই আন্দোলনের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনার পর আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় নিয়ে দলের দায়িত্বশীলরা কাজ করছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।