এম.এ আজিজ রাসেলঃ টানা ২২ দিন পর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে জেলেরা। মঙ্গলবার ভোরে জেগে উঠেছে কক্সবাজার জেলার সর্বোববৃৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে জমজমাট বিকিকিনি। মধ্যরাত থেকে সাগরের অল্প দূরে গিয়েই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরে ফিরে এসেছে জেলেরা। চালু হয়ে গেছে বরফকল। ইলিশ নিতে ভিড়েছে বড়-ছোট পরিবহন। এখনো শত শত ট্রলার সাগরে অবস্থান করছে। আগামী ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এসব ট্রলার কুলে ফিরবে। তখন ছড়াছড়ি হবে রূপালী ইলিশের। অবতরণ কেন্দ্রের শ্রমিকরা জানান, প্রজননের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় গত ২২ দিন অলস সময় পার করেছেন। তাই প্রথম দিনেই প্রচুর ইলিশ আসায় তাদের মধ্যে যেমন কর্মব্যস্ততা বেড়েছে, তেমনি আনন্দও বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথম দিন সকাল থেকেই যে মাছ আমদানি শুরু হয়েছে তাতে মৌসুম ভালোই কাটবে। দুয়েক একদিনের মধ্যে হাজার মণ ইলিশ আসতে পারে বাজারে। তবে মঙ্গলবার বাজার দর ওঠানামা করলেও কয়েকদিনের মধ্যে বাজার দর স্থিতিশীল থাকবে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এক আড়তদার জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের প্রাণ ফিরে এসেছে। প্রথম দিনেই পুরোদমে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। সাগর থেকে আরো ফিশিং ট্রলার ইলিশ ধরে ফিরে আসলে কর্মব্যস্ততা আরো বাড়বে।
খুচরা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, নতুন ধরা মাছের সঙ্গে পুরনো মাছও বাজারে আছে। কিছু মাছের পেটে এখনো ডিম রয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞার সময়টা আর একটু পিছিয়ে আনা হলে এমনটা হতো না। প্রথম দিন বড় মাছের পাশাপাশি জাটকাও রয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ আবদুল আলীম বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ই লক্ষ করা গেছে, নদীতে প্রচুর ইলিশের উপস্থিতি। তাই প্রথম দিন এতো ইলিশ পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরে সংরক্ষণের যে কথা উঠেছে তা আসলে ঠিক নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো বাজারে সকাল থেকে কোন লালচে ইলিশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। বাজার মনিটরিং করে সব মাছেই রূপালী আভা আর সাদার উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। ইলিশ লাল হয়ে গেলে তখন বলা যেতো আগের সংরক্ষিত মাছ। ডিমওয়ালা মাছের বিষয়ে ড. আবদুল আলীম বলেন, ইলিশ মূলত একবারে শতভাগ ডিম ছাড়ে না। ৬টি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় এরা ভাগ ভাগ করে ডিম ছাড়ে। আমরা মূলত মুখ্য একটি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। আর এতে যে পরিমাণ ডিম ছেড়েছে ইলিশ তাতে চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ থাকতে পারে, তবে খুবই কম। কয়েকদিন পর জাটকা ধরাতেও নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতণ কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল থেকে জাটকা ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায়। গোটলা (৪শ’ গ্রামের নীচে) ইলিশ মণপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার, ভেলকা (৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম) ১৫ থেকে ১৭ হাজার, এলসি (৬শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম) ২২ থেকে ২৫ হাজার, আর গ্রেট (এক কেজি বা এর উপরে) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৪০ হাজার টাকা দরে।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার অধীর অপেক্ষায় ছিলেন হাজারো ব্যবসায়ী ও জেলে পরিবার। শেষ হওয়ার পর বোট নিয়ে সাগরে নামতে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে ব্যবসায়ীরা। মধ্য রাত থেকেই সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় শত শত ফিশিং ট্রলার। আগামী এক সপ্তাহ মধ্যে ইলিশের ছড়াছড়ি হবে। সাধারণ মানুষ পাবে কাঙ্খিত রূপালি ইলিশের স্বাদ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।