দেশের দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আজ মহেশখালীর উপকূলে এসে পৌঁছেছে। শনিবার সন্ধ্যায় সামিট গ্রুপের তরফ থেকে তাদের মালিকানাধীন টার্মিনালটি দেশের উপকূলে আসার এই খবর জানানো হয়। সামিটের টার্মিনালটি উপকূলে এসে পৌঁছানোর সংবাদে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিতে (জিটিসিএল) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চলতি মাসের শেষের দিকে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। অন্যদিকে, বাকি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনতে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। টার্মিনালটি প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারবে।
সামিট জানায়, শনিবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে এলএনজিসহ সামিট গ্রুপের জাহাজটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপকূলে পৌঁছেছে। বর্তমানে এটি উপকূল থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে সাগরে ভাসমান অবস্থায় আছে।
সামিট জানায়, ১৫ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেটের কাছ থেকে এই ভেসেলটি ব্যবহারের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। বর্তমানে এই ভেসেলে কাতার থেকে আনা এলএনজি পরিবহন করা হচ্ছে। জাহাজটি ছাড়াও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ)টি এরইমধ্যে সাগরের নিচের পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, সামিট টেকসই উন্নয়নে প্রতিশ্রুতবদ্ধ।এতদিন আমরা বিদ্যুৎখাতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছি। আশা করছি জ্বালানি সরবরাহে আমাদের সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।তিনি বলেন, সরকার উন্নত দেশ গড়তে সাহসী নেতৃত্ব দিচ্ছে।বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রত্যাশায় সামিট সরকারের সেইসব উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে।
সামিটের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, টার্মিনালটিতে প্রথম ধাপে এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার তরল গ্যাস আনা হয়েছে।এর আগে গত ৬ এপ্রিল জাহাজটি কাতারের রাসগ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজি নিয়ে যাত্রা শুরু করে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবং পেট্রোবাংলার সহযোগিতা পাওয়া গেলে আগাম সাতদিনের মধ্যে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার আশা করছেন তারা।
সামিট এলএনজি টার্মিনাল আনলেও বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএল কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ইন্টারকানেশনটি শেষ হবে। এই সংযোগ হলে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনা সম্ভব। অন্যদিকে সমান্তরাল দুটি নির্মাণাধীন পাইপ লাইন শেষ করতে আগামী মাসেও জিটিসিএলকে কাজ করতে হবে জানিয়ে বলেন, আশা করছি মে মাসের শেষ নাগাদ পাইপ লাইনের কাজ শেষ হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল এই টার্মিনাল নির্মাণ এবং এর ব্যবহারে সামিট গ্রুপের সঙ্গে দুটি চুক্তি সই করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা । চুক্তি অনুযায়ী সামিট দেশের দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে।১৫ বছর ধরে পরিচালনার পর পেট্রোবাংলার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে সামিট। প্রকল্পে আমদানি করা এলএনজি ভাসমান সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ ও আবার গ্যাসে রূপান্তর করে তা পেট্রোবাংলার কাছে সরবরাহ করবে সামিট। আর ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে জিটিসিএল।
২০১৭ সালের শেষদিকে টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।এর আগে টার্মিনালটি নির্মাণের জন্য মেরিন ঠিকাদারি কনসর্টিয়াম প্রতিষ্ঠান জিওসান এসএএস এবং ম্যাকগ্রেগরের সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের টার্নকি চুক্তি সই করে সামিট।ওই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠান দুটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিট এলএনজি টার্মিনালের ভাসমান এলএনজি স্টোরেজ এবং আবার গ্যাসে রূপান্তরকরণ টার্মিনালের ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট, ফেব্রিকেশন, ইনস্টলেশন এবং স্থায়ী অবকাঠামোর টেস্টিং এর কাজ করেছে।
এর আগে গতবছরের ১৮ আগস্ট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছিল। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।