সালাহ উদ্দিন আহমদকে কেন আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সরকারকে যে রুল দিয়েছিল তার শুনানি আবারও ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে সোমবার।
হাইকোর্টের ওই শুনানি শেষে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন,“আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গেছে।”
বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রোববার পুলিশের পাঁচটি শাখা বলেছে, তারা সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার বা আটক করেনি। তবে তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
হাইকোর্টকে দেওয়া প্রতিবেদনে পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশ, র্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিশেষ শাখা (এসবি) পাঁচটি আলাদা প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে। গতকাল রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের এটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। বেলা আড়াইটার দিকে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তা আদালতে দাখিল করেন।
সালাহ উদ্দিন আহমদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দেন। এতে আদালত জানতে চান, সালাহ উদ্দিনকে কেন খুঁজে বের করে ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হবে না। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ আট বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আদালতের ওই আদেশ মেনে পুলিশ গতকাল প্রতিবেদন দেয়।
পুলিশের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে এটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ১১ মার্চ রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসিনা আহমদ ২০-২৫ জন টিভি সাংবাদিক ও ক্যামেরা নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় যান। তিনি পুলিশকে জানান, ১০ মার্চ রাত নয়টা থেকে ১০টার মধ্যে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে গেছেন। কার কাছে সালাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেলেন? পুলিশের এ প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমদ সদুত্তর দিতে পারেননি। পুলিশ প্রশ্ন তুলেছে, কেন সালাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার তথ্য পুলিশকে জানাতে ২৪ ঘণ্টার বেশি দেরি হলো এবং কেন সাংবাদিকদের থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল?
পুলিশ প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে মাহবুবে আলম আরও বলেন, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের তিনতলা ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার পশ্চিম দিকে থাকতেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ডিএমডি হাবিব হাসনাত ও তাঁর স্ত্রী সুমনা। পুলিশ যখন সেখানে যায়, তখন ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে দারোয়ান আখতার জানান, চার দিন আগে হাসনাত-সুমনা দম্পতি বাইরে যান। এ সময় ‘রায়হান’ নামে একজন মেহমানকে রেখে যান। হাসনাত দারোয়ানদের বলে যান, তাঁদের অনুপস্থিতিতে এই মেহমান বাসায় থাকবেন। ওই বাড়িতে রাত ১১টা পর্যন্ত ভাড়াটেরা গাড়ি নিয়ে আসা-যাওয়া করতেন। ১০ মার্চ আনুমানিক নয়টার দিকে চার-পাঁচজন হাসনাতের বাসায় যান। আনুমানিক আধা ঘণ্টা পর মেহমান ওই চার-পাঁচজনের সঙ্গে গাড়িতে উঠে চলে যান। ওই লোকটি সালাহ উদ্দিন কি না, সেটা তাঁরা জানেন না। বাসায় যাওয়া লোকদের গায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক ছিল না। তাঁদের কাছে কোনো অস্ত্রও দেখা যায়নি। বাইরে যে গাড়িটি অপেক্ষা করছিল, সেটাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ির মতো মনে হয়নি। মেহমানের হাতে কোনো হাতকড়া ছিল না, তাঁকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও মনে হয়নি।
গত মঙ্গলবার রাতে ডিবি পরিচয়ে একদল অস্ত্রধারী রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ আছেন।
সালাহ উদ্দিন আহমদের ‘নিখোঁজ’ হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পেশাজীবী মহাসমাবেশে বলেছেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আমরা তাঁকে অ্যারেস্ট করার জন্য খুঁজছি। তিনি কোথায়, তার জবাব খালেদা জিয়াই দিতে পারবেন। সালাহ উদ্দিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে বিবৃতি দিচ্ছিলেন। কিন্তু সবাই জানে, তিনি ওখান থেকেই (গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়) বিবৃতি দিয়েছেন। আট বস্তা ময়লার সঙ্গে তাঁকেও কোথাও পাচার করে দিয়েছেন কি না, সে জবাব খালেদা জিয়াই দিতে পারবেন।’
শীর্ষ নিউজ ডটকম
– See more
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।