নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও অসাধু বাণিজ্যের পাশাপাশি আদালত থেকে জামিন প্রাপ্ত হরেক রকম মামলার আসামীদের নিয়ে মুক্তি বাণিজ্যে নেমেছে কক্সবাজার কারা সুপার। ইয়াবা মামলার এক আসামীর জামিন নামা আদালত থেকে কারাগারে পৌছাঁর পর তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য নগদে সাড়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে স্বয়ং কারা সুপারের বিরুদ্ধে। এই টাকা কারারক্ষী, সুবেদার ও ফার্মাসিস্ট পর্যন্ত ভাগবাটোয়ারা পাওয়ার কথা থাকলেও পুরো অর্থ এক জনেই মেরে দেয়ায় বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে এ মুক্তি বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে চলছে নানা অসন্তুষ। এ বাণিজ্য নিয়ে যে কোনো মূর্হতেই নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে।
জানা যায়, বিগত ২৩ নভেম্বর ২০১২ সালে কক্সবাজার জেলা কারাগারে সুপার হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ সাঈদ হোসেন। যোগানের পর ২/১ মাস নিজেকে অনেকটা দরবেশ পরিচয়ে কারাগারের নানা গুনগান করলেও তার আসল চেহারা উম্মোচন হতে বেশি সময় লাগেনি কারাগারের কারারক্ষী, হাজতি ও কয়েদীদের কাছে। কিছু দিন পরেই ধারাবাকি ভাবে শুরু করে তার বাণিজ্য। শুরু হওয়া বাণিজ্য চলছে বিগত আড়াই বছর ধরে। তৎমধ্যে কারাগারের হাজতি ও কয়েদিদের দেখার ঘর, নিত্য দিনের খাবার, কারাগারের হাসপাতাল, সাজা প্রাপ্তদের কাজকর্ম বন্টন, বিভিন্ন ওয়ার্ডের সিট ব্যবসা, কারাগারের ভেতরে পিসি নামের দোকান, গোসল ও খাবার পানির সরবরাহ ব্যবসা সহ আরো একাধিক সেক্টর নিয়ে প্রতিদিন ও প্রতিমাসে চলে রমরমা বাণিজ্য। এ সব বাণিজ্য নিয়ে তার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদ করায় তার হাতে আড়াই বছরে বদলি হয়েছে অর্ধ-ডজন ডিপুটি জেলার সহ ৪ জেলার। মূলকথা তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কেউ রেহায় পাইনি। এদিকে উল্লেখিত এ সব বাণিজ্য নিয়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় প্রত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও আসামী মুক্তি বাণিজ্য তেমন একটা কারো জানা ছিলোনা। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ি টেকনাফ হ্নীলা লেদা এলাকার আবুল কাশেম এর পুত্র নুরুল হুদাকে নিয়ে এ জগন্য ঘটনার জন্ম দেয় কারা সুপার। আর এ ঘটনায় সহযোগি হিসেবে কাজ করে সুবেদার আব্দু রহমান, ফার্মাসিস্ট হামিদ ও সদ্য বদলী হয়ে যাওয়া কারারক্ষী আলীম। উল্লেখিত তিন জনের সহযোগিতায় কারা সুপার নুরুল হুদা যেন জেল গেইটে ফের গ্রেফতার না হয় এই প্রতিশ্র“তি দিয়ে তার আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে নগদে সাড়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘটনাটি ঘটে ১১ ফেব্র“য়ারি রাত সাড়ে ৮ টায়। চলতি বছরের ১১ ফেব্র“য়ারি ইয়াবা গডফাদার নুরুল হুদার জামিন নামা জেলা কারাগারে পৌঁছে দুপুরের ২ টার দিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নুরুল হুদার এক আত্মীয় জানান, জামিন হওয়ার আগেই থেকে জেল সুপার সাঈদ, নুরুল হুদাকে পূনরায় গ্রেফতার করার হুককি দমকি দিতো। এমন কি পুলিশ, ডিবি, ডিএসবি ও র্যাব দিয়ে জেল গেইটে ফের গ্রেফতার করা হবে বলে তার আত্মীয় স্বজন সহ তাকে জানাতো। পরে ফের গ্রেফতার এড়াতে তার সাথে কনট্রাক করতে বলে। এক পর্যায়ে কনট্রাকে এসে ৭ লাখ টাকা দাবী করে। পরে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় রাজি হয়। কিন্তু ১১ ফেব্র“য়ারি সকালে জামিনের খবর পেয়ে টাকার বাইরে পূনরায় ৩টি আই ফোন (মোবাইল সেট) দাবী করে। ২টি তার জন্য। অপরটি তার স্ত্রীর জন্য। পরে ফোন গুলিও সরবরাহ দেয়া হয়। এদিকে সূত্র জানায়, জেল সুপার সাঈদ যে দুটি মোবাইন ফোন ব্যবহার করছে তার কোনটার ক্রয় রশিদ নেই। ক্রয় রশিদ রয়েছে নুরুল হুদার এক ঘনিষ্ট জনের কাছে। তাছাড়া তার স্ত্রীর ফোনের ক্রয় রশিদ একই স্থানে। এদিকে টাকা গুলি নেয়ার পর পুরো অর্থ সুপারের নিয়ন্ত্রনে রাখার কারনে বর্তমানে পুরো কারাগার জুড়ে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। এ ব্যাপারে ফার্মাসিস্ট হামিদ জানান, কারাগারের হাসপাতালের বাণিজ্য, অফিস কল ও নুরুল হুদার বিষয়টি সবাই যেমন জানে আমি তাই জানি। তবে আমি ছোট চাকরিজীবি। ভাল খরাপ যা হউক সুপারের হস্তক্ষেপ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই।
একই ভাবে সুবেদার আব্দু রহমান জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার নুরুল হুদাকে আদালতের জামিন মুলে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে জেল গেইট থেকে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী যেন ফের গ্রেফতার করতে না পারে সে জন্য সুপার সাবেহ সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও তিনটি মোবাইল সেট তার আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে আদায় করার বিষয়টি কারাগারের সবাই যেমন জানে আমি তেমন শুনেছি। তবে জেলার ভাল বলতে পারবে। এ ব্যাপারে জেলার আনোয়ার হোসেন জানান, আমি ৮ ফেব্র“য়ারি যোগদান করি। আর এটি ১১ ফেব্র“য়ারির ঘটনা। কর্মস্থলে নতুন হিসেবে আমি নুরুল হুদাকে ভালভাবে ছিনতাম না। সুপার সাহেব আমাকে নুরুল হুদার মুক্তির বিষয়টি ডিএসবি’র (ডিআইওয়ানকে) জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছিলো। আমি ওনার কথামতো রেজিষ্ট্রারে সেটাই নোট হিসেবে লিপিবদ্ধ করে তাকে ছেড়ে দিই। তাকে ছাড়ার পরে জানতেছি এটি খুব জটিল বিষয় ছিলো। তবে ডিএসবি’র ডিআইওয়ান ওমর ফারুক জানান, শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ি বা স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার জামিনে মুক্তি পাচ্ছে বিষয়টি জেল সুপার আমাকে জানায়নি। যদি জানিয়েছে বলে আমার নামে নোট দিয়ে থাকে তাহলে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। নানা অপকর্ম ও ইয়াবা গডফাদার নুরুল হুদার কাছ থেকে নদগ অর্থ ও মোবাইল সেট আদায়ের ব্যাপারে জানার জন্য জেল সুপারের ব্যবহারিত টেলিফোন সেট এ ফোন দিয়ে প্রথম কুশল বিনিময় করার এক পর্যায়ে নুরুল হুদার প্রসঙ্গটি তুলার সাতে সাথেই ফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে একাধিকবার মোবাইল ও টেলিফোনে ফোন করা হলেও কারা সুপার রিসিভ করেনি।
এদিকে বর্তমান সময়ে জেলা কারাগার নিয়ে নানা অপকর্মের বিষয় গুলি এবং বর্তমান জেল সুপারের মুক্তি বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেয়ার জন্য উর্ধতন মহলের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।