২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

সিটি নির্বাচন হবে টার্নিং পয়েন্ট?

সিটি নির্বাচন হবে টার্নিং পয়েন্ট?
দেশ অন্ধকারে। কেউ কোনো আশার আলো দেখতে পারছে না। চারিদিকে শুধু হতাশা, ভয়, আতংক। ব্যবসা-বাণিজ্য আয়-রোজগার তো নেইই। ঘর থেকে বের হলেই বিপদ যেন ওঁত পেতে আছে। বোমা, পেট্টোলবোমা; নয়তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার বাণিজ্যের মুখে পড়ার আশংকা। শুধু ঘরের বাইরেই নয়, ঘরেও নিরাপদ নেই এখন আর মানুষ। হত্যা, গুম, খুন অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবে এ থেকে মুক্তি পাবে তা কেউই জানে না। সরকার অনঢ় হয়ে বসে রয়েছে। দেশ-বিদেশের প্রায় সবাই একযোগে সংলাপে বসার জন্য সরকারকে চাপ দিলেও সরকার তাতে রাজি নয়। যেহেতু বন্দুকের মুখে বড় কিছু একটা করার ক্ষমতা বিরোধীদলের নেই, তাই তারা মনে করছে, এক পর্যায়ে বিরোধীদল রণে ভঙ্গ দেবে। অন্যদিকে বিরোধীদলও এবার আর ছাড় দিতে রাজি নয়। তারাও এর একটা শেষ দেখতে চায়।

তবে সবকিছুর মধ্যেই সরকারের সামনে একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা নিয়ে। সব পথ ব্যর্থ হবার পর অবশেষে সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একটা উপায় পেয়েছে, আর তা হলো- সিটি নির্বাচন। বিশেষ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে ছিলো। এটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি ছিলো না। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সরকার এতোদিন নির্বাচন দেয়নি হেরে যাওয়া এবং রাজধানীর নিয়ন্ত্রণভার বিরোধীদলের হাতে চলে যাওয়ার ভয়ে। এখন সরকারের সামনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাটা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে না পারলে ক্ষমতার ভিত যে কোনো সময় ধ্বসে পড়তে পারে। কারণ, এরজন্য সবাই সরকারকেই দায়ী করছিলো।

কিন্তু, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, আসন্ন এই সিটি নির্বাচন বতর্মান রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বিরোধীদল একে তাদের রাজনীতির জন্য মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে এমন আভাস দিয়েছে। তারা মনে করছে, এর মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো সহজ হবে। নির্বাচনে গণজোয়ার সৃষ্টির মাধ্যমে আন্দোলনকে ‘যৌক্তিক পরিণতি’র দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন। সিটি নির্বাচনে ভোটের ফলাফল যা-ই হোক সেটা বিরোধীদলের পক্ষে যাবে বলেই তারা মনে করছেন।

এদিকে, এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ব্যবসায়ীদের এক আলোচনা সভায় বলেছেন, সিটি নির্বাচনের পর সল্প সময়ে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন বলে পরিচিত ব্যবসায়ী নেতা কাজী আকরামের এই বক্তব্যেও রাজনীতির গতি-পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।

হরতাল-অবরোধের রেকর্ড

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যে নির্বাচনটিতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অংশ নিয়েছিলো শুধুমাত্র জাতীয় পার্টি। যাকে গৃহপালিত বিরোধীদল বলেই অনেকে আখ্যায়িত করে থাকেন। ওই নির্বাচনে ভোট কত পার্চেন্ট পড়েছে সেই বিতর্কে না গেলেও সরাসরি এটা বলা যায়, ১৫৩টি আসনে কোনো ভোটই হয়নি। কারণ, এ আসনগুলোর প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। এতে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু আসনে ভোট হয়েছে এবং সেই ভোটে এ সরকার গঠিত হয়েছে। যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।

অথচ, এই সরকারই পুরো মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছিলো। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছিলো মধ্যবর্তী নির্বাচন ও সংলাপ আয়োজনের জন্য। তাতে সরকার কর্ণপাত করছিলো না। বরং সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিএনপি নেতাদের আন্দোলনের সক্ষমতা নিয়ে বিদ্রুপ করছিলো। আর এরই মধ্যে ঘুরে এলো সেই ৫ জানুয়ারি, বিতর্কিত নির্বাচনের প্রথম বর্ষপুর্তি। ৫ জানুয়ারিতে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘোষণা করলো এবং তা থেকে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো গোটা দেশের রাজনীতিতে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে আটকে রাখা হলো। এর পর থেকে শুরু হলো লাগাতার অবরোধ।

আন্দোলন-সংগ্রাম, হরতাল-অবরোধ এদেশে নতুন নয়। বলা যায়, এ শব্দগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ অতি পরিচিত। তবে অতীতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে কখনো লাগাতার হরতাল অবরোধ হয়নি। গত ৬ জানুয়ারি বিরোধীদল লাগাতার অবরোধ শুরু করেছে। এর এক পর্যায়ে এসে যুক্ত হয়েছে হরতাল। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে একদিকে যেমন যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তেমনি মানুষও হতাহত হয়েছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় সেই সুযোগে এরাও মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে এবং এখনো চালাচ্ছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই লাগাতার হরতাল-অবরোধে সারাদেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির মেরুদ- ভেঙে পড়েছে।

কারো কথাই শুনছে না

দুই রাজনৈতিক পক্ষের যাঁতাকলে পড়ে বাংলাদেশের মানুষের যখন ত্রাহি অবস্থা, এ সময়ে সারা বিশ্ব থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সংলাপ তথা আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বারংবার। জাতিসংঘ থেকে উদ্বেগ, এমনকি মহাসচিব বান কি মুন উভয় নেত্রীকে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়েছেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা দফায় দফায় বৈঠকে বসেছেন। তারা একযোগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া, বিরোধীদলের নেতা, সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবাই একযোগে একই কথা বলেছেন, আর তা হলো- সংলাপ। এদিকে দেশের মধ্য থেকেও প্রতিনিয়ত সংলাপ-আলোচনার জোরালো দাবি তোলা হয়েছে। সভা-সেমিনার, বক্তৃতা-বিবৃতিতে সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী প্রভৃতি সংগঠনের ব্যানারে এ দাবি তোলা হয়েছে। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি। সরকার কোনো ক্রমেই আলোচনায় বসতে রাজি নয়। এর কারণ হলো, আলোচনায় বসলেই সরকারকে ছাড় দিতে হবে। ছাড় দেয়া মানেই মধ্যবর্তী নির্বাচন- যা তারা মানতে মোটেও রাজি নয়। যদিও এটাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের একমাত্র সমাধান বলে মনে করছেন সবাই।

‘অশুভ লক্ষণ’

সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক সময় ছিলেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। ১৯৯১-৯৬ টার্মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর রাজনীতিতে যোগ দেন- সংসদ সদস্য এবং প্রতিমন্ত্রী হন। রাজনীতির এই দুর্যোগের সময় ২০ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। চলতি মাসের ১০ তারিখে উত্তরার একটি বাড়ি থেকে ‘নাই’ হয়ে গেলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সাদা পোশাকের লোকজন তাকে তুলি নিয়ে গেছে। প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিলো, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতোই আদালতে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু, যতোই দিন যাচ্ছিলো অনিশ্চয়তা বাড়ছিলো। অবশেষে এখন সবাই ভাবতে শুরু করেছে, ইলিয়াস আলীর ভাগ্যই তাকে বরণ করতে হয়েছে।

আগেই বলা হয়েছে, গুম এখন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও ইতিপূর্বে এ ধরনের যে কোনো ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুতর ঘটনা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু, সালাহ উদ্দিন আহমেদের পর্যায়ের একজন ব্যক্তি হঠাৎ ‘নাই’ হয়ে যাওয়াটাকে কেউ স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। সাবেক মন্ত্রী ও সরকারি দলের শীর্ষ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পর্যন্ত একে ‘অশুভ লক্ষণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর কারণ, এরপর কেউই এখন আর নিজেকে ‘নিরাপদ’ ভাবতে পারছেন না। যা গোটা রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত বলে আখ্যায়িত করছেন পর্যবেক্ষকরা।

এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্লগার অভিজিত ও ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ড এবং এর পাশাপাশি ভারতের বর্ধমানে বোমা হামলার ঘটনার চার্জশিটে বাংলাদেশিদের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ থাকাটা অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করছে। রাজনীতিকে সঠিক পথে এগুতে না দিলে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। দেশে চরমপন্থার উদ্ভব হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

যে কারণে সরকার সিটি নির্বাচন আয়োজন করছে

সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে ঢাকা সিটি উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল ৩ সিটির নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এ মুহূর্তে সরকার কেন হুট করে সিটি নির্বাচনের ঘোষণা দিলো? সরকার কি জানতো না, বিরোধীদল সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে? এ প্রশ্নগুলো বর্তমান রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এর উত্তরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বিরোধীদল যে সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এটা সরকারের মাথায় অবশ্যই ছিলো। গোয়েন্দা তথ্যেও তা-ই বলা হয়েছিলো। তারপরও সরকার বেশকিছু উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই সিটি নির্বাচনের কাজে হাত দিয়েছে।

প্রথমত, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাটাই এ মুহূর্তে সরকারের সামনে বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানিতে ধ্বস নেমেছে। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরের বেশিরভাগ অর্ডারই বাতিল হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা পুঁজি ভেঙে চলেছে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ী সমাজ থেকে চাপ আসছিলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। শুধু ব্যবসায়ী সমাজই নয়, সকল শ্রেণীর মানুষেরই এ মুহূর্তের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। বিদেশিদেরও এ ব্যাপারে প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। কিন্তু, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। সেটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে কিছু গাড়ি চলা মানেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া নয়। এমন অবস্থায় সিটি নির্বাচন দেওয়া ছাড়া সরকারের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা ছিলো না। আর তাই সরকার এ সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষের মন থেকে ভয়-আতংক কেটে যাবে। পরিস্থিতি এতে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

দ্বিতীয়ত, সরকার এমন এক সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ ৩ সিটির নির্বাচনের আয়োজন করেছে যখন রাজপথে প্রধান বিরোধীজোট একটি জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার হরতাল-অবরোধ পালন করে যাচ্ছে। সরকার বিরোধী টানা আন্দোলন করতে গিয়ে বিরোধীজোটের অনেক নেতাকর্মীই আছেন কারাগারে। যারা বাইরে তারাও গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, বিগত ৬ বছর যাবত আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও রাজধানী ঢাকা ছিলো প্রশাসনিকভাবে তাদের কব্জার বাইরে।

বিভিন্ন সময় ঢাকা সিটি নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও নিজেদের প্রার্থীর ভরাডুবি হবে এমন আশঙ্কা থেকে সরকার পিছু হটে। সে সময় বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির হাত থেকে রাজধানী ঢাকাকে নিজেদের হাতের মুঠোয়  আনতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্টতার বলে ঢাকাকে দুইভাগে বিভক্তের বিল পাস করে।

এতে পদ হারান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ কাউন্সিলররা। সরকারি কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলে যায় সিটি করপোরেশন। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে ঢাকার এই দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু সেই থেকে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে এ পর্যন্ত এসেছে শুধুমাত্র নির্বাচনে হেরে যাবার ভয়ে।

ঢাকা সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারবেন এমন পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা সরকার অনেক আগ থেকেই করে আসছিলো। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এখনই সিটি নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করেছে সরকার। কারণ, এখন একদিকে বিএনপি-জামায়াতের জনপ্রিয় প্রার্থীরা বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ও অন্যরা অনেকে আত্মগোপনে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি সিটি নির্বাচনে ভালোভাবে অংশ নেওয়ার কথা নয়, অংশগ্রহণ করলেও ভালো ফলাফল পাবে না। মন্ত্রী শাহজাহান খান ইতিমধ্যে এক বক্তৃতায় এমন আভাস দিয়েছেনও যে, বিএনপি নির্বাচনে হারবে। অর্থাৎ বিরোধীদলের পলায়নপর অবস্থায় সরকারি দল নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে, এমন পরিকল্পনা থেকেই এ মুহূর্তে হুট করে সিটি নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, ৩ সিটির নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝানোর চেষ্টা করবে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনও নিরপেক্ষভাবে হওয়া সম্ভব। মেয়র পদে যদি বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয় তাহলে সরকারের জন্য আরো সুবিধা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝানো তাদের জন্য আরো সহজ হবে। যেমনটা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে।

২০১১ সালে আদালতের রায়ের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর বিএনপি-জামায়াত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিলের প্রতিবাদে ও পুনরায় বহালের দাবিতে মাঠে নামে।

এরপরই আওয়ামী লীগ উপজেলা ও কয়েকটি সিটি নির্বাচনের আয়োজন করে। যেসব উপজেলায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।

আর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া সব কয়টিতেই বিএনপি তথা ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।

সিটি আর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের বিজয় আওয়ামী লীগ কৌশলে নিজেদের বৃহত্তর স্বার্থে কাজে লাগিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যখনই কেয়ারটেকার সরকারের দাবি তুলেছে তখনই আওয়ামী লীগ উদাহরণ হিসেবে বিগত দিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোকে সামনে নিয়ে আসছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও তারা আন্তর্জাতিক মহলকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এবং বিএনপি-জামায়াতের লোকজন এতে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছে। এখন আমাদের (বর্তমান সরকার) অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের (বিএনপি জোট) সমস্যা কোথায়?

একই উদ্দেশ্য হাসিলে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ৩ সিটি নির্বাচনের আয়োজন করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

চতুর্থত, আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং জয়লাভ করে তাহলে তারা সন্তুষ্ট হবে। আন্দোলন থেকে সরে আসবে। সরকারকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নির্ঝঞ্জাটভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেবে।

বিএনপি যেভাবে দেখছে

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এটা সহজেই বুঝতে পেরেছেন যে, সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন দীর্ঘ লাগাতার আন্দোলনের ইমেজে ভাটা পড়বে এবং সরকার সেই উদ্দেশ্যেই এটি করছে। তাছাড়া নেতাকর্মীদের জেলসহ নানা প্রতিকূলতাও তাদের রয়েছে। তারপরও বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো, নির্বাচনটি তাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে তারা মনে করছেন। এতে তাদের হারলেও লাভ, জিতলেও লাভ। হারলে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে সরকার পতনের নতুন আন্দোলন শুরু করতে পারবে। আর ফল ভালো হলে এর মধ্য দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে পারবে।

তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপি নেতারা নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো অনেক সন্দিহান। বাস্তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেবে কিনা সরকার, এ নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে তাদের মধ্যে। তারা মনে করছেন, সরকার সিটি নির্বাচনকে নিয়ে একটা কূট চাল চেলেছে। বিএনপিকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হতে পারে। তারপরও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবে রয়েছেন। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমন দোটানা ভাব চলবে ২ এপ্রিল রাত পর্যন্ত। তারা দেখবে, বিএনপি নেতাদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র গুলোর ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করে কিনা।

কূটনৈতিকদের দৃষ্টি

সংলাপ বা আলোচনা আয়োজনের উদ্যোগ ব্যর্থ হবার পর বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনৈতিকরা এতে আপাতত বিরতি দিয়েছেন। তারাও এ মুহূর্তে তাকিয়ে আছেন সিটি নির্বাচনের দিকে। তারা মনে করছেন, সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের একটা মীমাংসা হয়তো হতে পারে। তাই তারা চাচ্ছেন, সিটি নির্বাচনটি হোক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিটি নির্বাচন আয়োজনকে এ মুহূর্তে কূটনীতিকরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তারা মনে করছেন, সিটি নির্বাচনের পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন কর হবে। তাতে রাজনীতির গতি পরিবর্তন হবে। এটা একটা শুভ লক্ষণ।

নির্বাচন আদৌ হবে তো?

সবকিছুর পর এখন আরেকটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আর তা হলো, নির্বাচন আদৌ হবে তো? অনেকেই মনে করছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে আবারো সরকারের অদৃশ্য কোনো ইশারায় নির্বাচন কমিশন যেকোনো অজুহাত দেখিয়ে সিটি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণাও করতে পারে।

এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই নির্বাচনটি সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। কারণ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে বিদেশিদের চাপ এড়ানোর এটাই একমাত্র উপায়।

তাছাড়া নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করে পরক্ষণেই তা বন্ধ করে দিলে দেশে-বিদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকার নির্বাচনকে ভয় পায়, এটাই প্রমাণিত হবে।

রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট?

তিনটি সিটি কর্পোরেশন, বিশেষ করে ঢাকার দু’টি সিটি নির্বাচন বর্তমান রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। ঢাকায় বর্তমানে জনসংখ্যা কত, এর সঠিক হিসাব কারো কাছেই নেই। তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ঢাকার জনঘনত্ব পৃথিবীর অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি। সর্বশেষ ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০২ সালের এপ্রিলে। ১৩ বছর পর এখানে সিটি নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে। তাই নগরবাসীর এটি বহুল কাক্সিক্ষত একটি নির্বাচন। এই নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলে তাতে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ ঘটবে এবং তা আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি করবে। যা বর্তমান রাজনীতির গতি পরিবর্তন করে দেবে, মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

– See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/04/02/75073#sthash.JmLkrbe7.dpuf

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।