বিশেষ প্রতিবেদকঃ কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদে বাড়িভিটার সীমানা বিরোধের জের ধরে এক মধ্যবয়সী নারীকে পিটিয়ে মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে প্রভাবশালী প্রতিবেশীরা। দীর্ঘ ২০দিন নানা হাসপাতালে চিকিৎসার পর অবশেষে শয্যাশয়ী পঙ্গুত্ব নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিন দুপুরে ঘটনাটি ঘটলেও কোন আইনি সুরাহা পায়নি পরিবারটি। উল্টো হামলার বিষয়ে কোথাও প্রতিকার চাইতে গেলে পুরো পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অসুস্থ নারীর স্বামী।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছে অসহায় দরিদ্র পরিবারটি। কিন্তু এরই মাঝে আঘাতকারি যুবক নিরবে প্রবাসে পালিয়ে গেছে। আর তাদের পরিবারের অন্য পুরুষরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসন ম্যানেজ করতে তৎপর রয়েছে।
পঙ্গুত্ব বরণ করা রাজিয়া বেগম (৪৫) কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পাহাশিয়াখালী ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রমজীবী মমতাজ আহমদের স্ত্রী।
রাজিয়ার স্বামী শ্রমজীবী মমতাজ আহমদ বলেন, বিত্তশালী প্রতিবেশী কবির আহমদ ও আমাদের ভিটার মাঝখানের সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ হয়ে আসছে। আমাদের বাড়ির দেয়ালের ভেতর তাদের জমি রয়েছে দাবি করে প্রায় সময় হাঙ্গামা করে তারা। এনিয়ে বেশ কয়েকবার শালিস হয়েছে। এতে তাদের প্রতিষ্ঠিত না হলেও দরিদ্র হওয়ায় তারা বার বার আমার পরিবারের উপর জুলুম করে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে আমি কাজে চলে যায়। আমার পেছন পেছন স্ত্রী রাজিয়া চলে যান ক্ষেতে। এরই মাঝে কবির আহমদের ছেলে ফরিদুল আলম (৪০), বদিউল আলম (৩৮), ফরিদুল আলমের ছেলে প্রবাস ফেরত মিজানুর রহমান (২৫) ও বদিউল আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন (১৮) গিয়ে বাড়ির বাঁশের বেড়া ভেঙ্গে মাটির দেয়াল খুড়ে ছারখার করে দেয়। খবর পেয়ে সবজি ক্ষেত থেকে রাজিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে এসবের কারণ জানতে চাওয়া মাত্রই সবাই মিলে তাকে প্রহার করে। এক সময় রাজিয়া মাটিতে পড়ে গেলে তার পিটে কোদালের কাধা (ধারালো অংশের অপরদিক) দিয়ে আঘাত করে মিজানৃুর রহমান। এতে রাজিয়া অজ্ঞান হয়ে গেলে তারা চলে যায়। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি খবর পেয়ে সেখান থেকে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে তারা আঘাত গুরুতর দেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে এক্সে করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রাজিয়ার মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। তা জোড়া লাগানো সম্ভব নয়। মোটামুটি ভাবে সুস্থতার পর রিলিজ করে দেয়ায় শনিবার তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। রাজিয়া বেগম এখন অন্যের সহযোগিতায়ও উঠাবসা করতে অক্ষম। এ নির্যাতনের বিচার চেয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যা থানা পুলিশকে তদন্তে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, টাকার গরমে মিজানুর রহমানরা এলাকায় দাপট দেখান।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সবার সাথে সখ্যতা রাখেন বলেই প্রতিবেশী মমতাজের স্ত্রীকে দিনদুপরে মেরে পঙ্গু করলেও কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি। ঘটনার পর পরই আঘাতকারি প্রবাস ফেরত মিজান কাতার চলে গেছে।
ইসলামাবাদ ইউপির পাহাশিয়াখালী এলাকার সদস্য (মেম্বার) আবদুর রাজ্জাক বলেন, সীমানা বিরোধ নিয়ে তাদের মাঝে প্রায় ঝগড়া হতো। এ নিয়ে কয়েকবার বৈঠকও হয়েছে। ওইদিনও সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। তবে, তার স্ত্রীর মেরুদন্ড ভেঙ্গে পঙ্গু হবার বিষয়টি জানতাম না। বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক (তদন্ত) মিনহাজ মাহমুদ বলেন, তারা আমাদের কাছে আসেনি। আদালতে দেয়া অভিযোগ হাতে পেলে সরেজমিন গিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে যথাযথ আইনী সহায়তা দেয়া হবে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত কবির আহমদের পরিবারের বড় ছেলে ফরিদুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় আদের বক্তব্য জানা যায়নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।