২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় হাজারো রোহিঙ্গা!

picsart_1480204465572
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এমন খবর সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত একাধিক লোকজন জানিয়েছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে (সাবেক আরাকান) সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন সইতে না পেরে গত ১০নভেম্বর থেকে অন্তত দশ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে টেকনাফের নাফ নদী ঘেঁষে নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালং আনরেজিষ্টার্ড শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে মিয়ানমারের মংডু থানাধীন কুয়ারবিল এলাকায় বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও ঝোপ জঙ্গলে শত শত রোহিঙ্গা আত্মগোপন করে আছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। নির্যাতিতরা নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের ঝিমংখালী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড -বিজিবি এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর কড়া নজরদারীর মুখে তারা ঢুকতে পারছে না। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের ৩টি পয়েন্ট থেকে রোহিঙ্গা বহনকারী ৪টি নৌকা মিয়ানমারের দিকে ফেরত পাঠিয়েছে তারা। রোহিঙ্গা বহনকারী ওই নৌকাগুলোতে কতজন রোহিঙ্গা ছিল তা অবশ্য জানা যায়নি। সূত্র নিশ্চিত করেছে বিজিবির নজরদারীর মধ্যেও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দালালদের মাধ্যমে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। শুক্রবার সীমান্ত অতিক্রম করে উখিয়ার কুতুপালং আনরেজিষ্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে গতকাল শনিবার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে নতুন কোন রোহিঙ্গার আগমন ঘটেনি বলে জানায় সূত্রটি।
picsart_1480204559172
এদিকে নাফ নদী সংলগ্ন টেকনাফের আনরেজিষ্টার্ড ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাইরেও উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে গত কয়েকদিনে অন্তত পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের আরো ভয়ংকর তথ্য জানা গেছে। মাতৃভূমি ছেড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ভুক্তভোগিরা বলেছেন, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, প্রকাশ্যে গলাকেটে এবং ব্রাশফায়ারে হত্যা করা, বিভিন্ন বয়সী নারীদের ধর্ষণ ছাড়াও ঘরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের আটকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার আগে লুটপাট করা হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও চলছে লুটপাট। ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণকারীদের যেসব স্বজন মিয়ানমারের সীমান্তে এসে বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অপেক্ষমান আছেন তাদের কয়েকজনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে সেখানকার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং আনরেজিস্টার্ড মুসলিম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শনিবার দিনভর সরেজমিন ঘুরে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে গা শিউরে উঠার মত অনেক অজানা তথ্য জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে রাখাইন রাজ্যের মংডু থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে। কথা বলার সময় সবার চোখে মুখে ছিল চরম আতংক। যারা পালিয়ে এসেছেন তারা জানেন না এখানে কতদিন থাকতে পারবেন। আর যারা পালিয়ে আসতে পারেননি তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে এরা বলতে পারছেন না। তবে কেউ কেউ অত্যন্ত গোপনে মুঠোফোনে যোগযোগ করে স্বজনদের খবরা খবর নেয়ার চেষ্টা করছেন।
picsart_1480204597210
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু থানাধীন লুদাই গ্রামের মৃত ছালামত উল্লাহর ছেলে নুর কবিরের বর্ণনায় উঠে এসেছে তার পরিবারে সদস্যদের ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কথা। ৩০ বছর বয়সী নুর কবির বলেন, তার ৫ বিঘা ধানী জমি ছিল। তা কেড়ে নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। এরপর পরিবারের ১১ সদস্যের মধ্যে পুরুষরা আশ্রয় নেয় ঝোপ ঝারের মধ্যে। মেয়েরা আশ পাশের বাড়িঘরে আশ্রয় নেয়ার জন্য ছুটাছুটি শুরু করে। এরই মধ্যে তার ২৫বছর বয়সী এক বোন হাসিনাকে ধরে নিয়ে যায় সেনারা। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। একদিন পর হাসিনার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। নুর কবির যখন কথা বলছিলেন তখন তার চোখ গড়িয়ে পানি পরছিল। তিনি বলেন, আমার বোনটাকে ধর্ষণের পর হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাষন্ডরা। তার ৩ বছর বয়সী পুত্র সন্তান আফতাব এবং ৬ মাস বয়সী কন্য সন্তান রেহেনাকেও আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছে। আমার ৮ বোনের মধ্যে হাসিনার কথাতো বললাম। বাকি ৭ বোন এবং ২ ভাই এর কোন খবর পাচ্ছি না। তারা বেঁচে আছে কিনা তাও জানিনা। আমাদের পুরো পরিবারটায় নি:শ্বেষ করে দিয়েছে ওরা। নুর কবির জানান, এক সময় ভোটার তালিকায় তার নাম ছিল কিন্তু কিছুদিন আগে তারা বলে তোমরা এদেশের নাগরিক না। এজন্য ভোটার তালিকা থেকে নামটিও কেটে দেয়া হয়। তার ধানী জমি ছাড়াও একটি দোকান ছিল। কয়েকদিন আগে সে দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। পরে দোকানটি পুড়িয়ে দেয়া হয়। সেনাবাহিনীর সাথে স্থানীয় রাখাইনরাও (মগ) লুটপাটে ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়।
মংডু থানাধীন নাইসাপ্রু গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদ সেলিমের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম ছোট ছোট ৩ সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কুতুপালং শিবিরে। শনিবার বিকেলে কথা হয় ছেনুয়ারা সাথে। তিনি বলেন, সেদেশের সেনাবাহিনী আমার সামনে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে। তার এ পরিণতি আমাকে কাছ থেকে দেখতে হয়েছে। এরপর আমি নিরাপত্তার জন্য বাচ্চাদের নিয়ে বার্মার কুমারখালী সীমান্তে পৌঁছে এক দালালের মাধ্যমে পালিয়ে আসি। বাড়ি থেকে বের হবার পর বাচ্চাদের নিয়ে নদী পার হয়ে প্রায় ২৫কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এখানে আশ্রয় নিই। ছেনুয়ারা জানান, তাদের বাড়ির আশে পাশের কয়েকটি বাড়ির অনেক যুবতী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কেউ এতে রাজী না হলে সেনাসদস্যরা বুট জুটা দিয়ে বুকের উপর পা রেখে তাকে নির্যাতন করে। সেনারা যখন গ্রামে ঢুকে তখন পুরুষ মানুষ জীবনের ভয়ে পালাতে থাকে। এসুযোগে অসহায় নারীদের উপর চলে বর্বর নির্যাতন। তাদের বাড়ির পাশের ছৈয়দ হোসেন, ধলু মিয়া ও গুরা মিয়াকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে আরো অনেক অজানা করুণ কথা জানা গেছে। যেমন বলা যেতে পারে ২৫ বছর বয়সী জুবায়েরের কথা। তার বাবার নাম আমির হোসেন। বাড়ি রাখাইনরাজ্যের মংডু থানাধীন মিয়াজান পাড়া গ্রামে। সেদেশের সেনাবাহিনী তার বংশের ১৪ জনকে নৃশংভাবে হত্যা করেছে। এছাড়া তার বাবা এবং শশুরসহ যাদের ধরে নিয়ে গেছে তাদের ফেরত পাবারও আশা নেই। তিনি বলেন, স্থানীয় বলি বাজারে আমার মনোহরি দোকান ছিল। দোকানটি লুটপাট হয়েছে। এমনকি আমার বাড়িতে কিছু নগদ টাকা ও স্বর্ণগহনা ছিল সেগুলোও নিয়ে গেছে তারা।
ষাট বছর বয়সী হামিদা খাতুন জানান, তার মেয়ে ছমুদার স্বামী নুরুল ইসলামকে হত্যার পর লাশ টেনে হেচড়ে রাস্তায় নিয়ে লাশটি পুড়িয়ে ফেলে তারা। কাউকে হত্যার পর তার জানাযাও করতে দেয়া হয়না। এমনকি লাশটি যে মাটিতে দাফন করা হবে আমরা সে সুযোগও পাইনা। আমাদের উপর কেন এই নির্যাতন নিজেরাও জানিনা। তিনি বলেন, আমার আর কেউ তো থাকলোনা। সেদেশে আমি আর কিভাবে ফিরবো? পাশের গ্রাম খেয়ারীপাড়ার আবু আলমের ২৫ বছর বয়সী ছেলে শাহআলম তিনদিন আগে এই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, তার ভাই রফিক ও বোন নুর জাহানকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার ৫ ভাই ও পরিবারের স্বজন সহ ১৩ জনকে ধরে নিয়ে গেছে। তারা বেঁচে আছেন কিনা জানিনা। আমার বাড়ি ও ৩ টি গরু সহ গোয়াল ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
পঞ্চাশ বছর বয়সী হামিদা খাতুনের ট্রাজেটি আরো করুণ। তার স্বামীর নাম ছালামত উল্লাহ। বাড়ি মংডু থানার নাইসপ্রু সাত ঘড়িয়া পাড়ায়। তিনি বলেন, আমার স্বামী, দেবর এহসান উল্লাহ, রুহুল আমিন, আমার চাচাতো ভাই আমিন উল্লাহ, প্রতিবেশী লালমিয়া, এজাহার মিয়া, সরুজন ও গুরা মিয়াকে বাড়ি থেকে আটকের পর রাস্তায় নিয়ে এক লাইনে দাঁড়া করায়। এরপর একজন একজন করে সবাইকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। ঘটনার তারিখ মনে করতে না পারলেও হামিদা খাতুন জানান, ওই একইদিন ১৪/১৫ জনকে একই ভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া তার চেনা জানা ৩০জন যুবতী মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। যেসব শিশুরা বেঁচে ছিল তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে বুট জুটা দিয়ে পিষে রক্তাক্ত করা হয়। ধর্ষণের শিকার ওই ৩০ তরুনী কোন না কোনভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি। তাদের কেউ কেউ লজ্জায় আত্মহত্যা করতে চায়।
ষোল বছর বয়সী গুলতাজ ওই ক্যাম্পের ৮সদস্যের একটি পরিবারের সাথে আশ্রয় পেয়েছে। মংডুর খেয়ারীপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী গোলতাজ বলেন, তার বাবাকে তার সামনেই জবাই করে হত্যা করা হয়। আমার তের বছর বয়সী এক বোন রোকেয়া ও নিকট আত্মীয় নুরতাজকে ঘরের মধ্যেই ধর্ষণ করে। পরে ঘরটি পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার ধর্ষিতা বোন নুরতাজ সহ দুইজন কোথায় আছে সে জানে না। গোলতাজের স্বামী আনোয়ার জানান, প্রথমে খেয়ারী পাড়া বাজার পুড়িয়ে দেয়া হয়। কারণ সে বাজারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অনেক দোকান আছে। শুধু তাই নয়, সেনারা তাদের বাড়ির আশে পাশের অন্তত ২০ জনকে একটি ঘরে আটকে বাইরে তালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে ঘরটি পুড়িয়ে দেয়। এদের মধ্যে তার মামা শশুর রফিক আলমও ছিলেন। বাকি ১৯জন একই পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। আনোয়ার বলেন, আমার ভাই আবদুল গনি এখনো বার্মা আছে। সে আমার কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছে, তারা বাংলাদেশে ডুকতে পারবে কি না। সে আরও জানায়, মংডু থানার হাতিপাড়া, সাতঘরিয়া খেয়ারিপাড়া, নাইচারডিল, ছালিপ্রাং ও আমতলিসহ কয়েকটি এলাকার বাড়িঘর ঘেরাও করে রেখেছে সেনাবাহিনী। সেখান থেকে কারও পালানোরও পথ নেই।
কুতুপালং ক্যাম্পে দেখা হয় পালিয়ে আসা সারোয়ার নামের ২০বছর বয়সী এক তরুণের সাথে। তার বাবার নাম ইউছুপ আলী। মংডুর নাগপুরা গ্রামে তাদের বাড়ি। সে সহ ৬জন গত সোমবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসে। শুক্রবার সে তার বোন সুরাইয়াকে ফোন করে সেদেশের খবর জানতে চায়। সুরাইয়া তাকে জানিয়েছে, তার বাবা বাড়িতে আছে। সাথে এক ভাই। তবে তার মা সহ ৫ বোন সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে বাড়ি ছেড়ে সীমান্তবর্তী শীলখালী এলাকায় দুদিন ধরে অবস্থান করছে। তার বাবা তাকে জানিয়েছে, তাদের দোকানটি লুটপাট করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তাদের বসত ঘরটি এখনও আগের মতই আছে। সারোয়ার জানান, তার এক চাচাতো ভাই ইসমাইলকে হত্যা করা হয়েছে। ভগ্নিপতি আনোয়ারকে ধরে নিয়ে গেছে সেনারা। বাংলাদেশে আসার জন্য সীমান্তে অবস্থান নেয়া সুরাইয়ার সাথে শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে কথা বলে সারোয়ার। এ সময় তার বোন তাকে জানায়, তার মাসহ ১২জন শীলখালী সীমান্তে পালিয়ে আছে। সেখানে গত দুইদিন ধরে তাদের কোন আহার জুটছে না। যে কোন সময় তারা ধরা পড়ে যেতে পারে বলে সে আশংকা প্রকাশ করছে।
এদিকে উখিয়ার কুতুপালং আনরেজিষ্টার্ড রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারী নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ওই ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর বলেন, মিয়ানমারে দিন দিন হত্যা নির্যাতন বেড়েই চলছে মুসলমানদের উপর। কেউ সর্বস্ব হারিয়ে কেউ জীবন রক্ষার তাগিদে পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিচ্ছে। ১০ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান তিনি। নতুন করে যারা আসছে আগে থেকে অবস্থানকারীরা তাদের ঘরে আশ্রয় দিচ্ছে। ক্যাম্প ঘুরেও তার এ কথার সত্যতা মিলেছে। ক্যাম্পের ছোট ছোট একেকটি রুমে ১০/১২ জন করে কোন মতে মাথা গুজে আছে। এ এক মানবেতর জীবন। এমনিতেই আগে থেকে যেসব রোহিঙ্গা আছে এ ক্যাম্পে তারা এক বেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে কোন মতে বেঁচে আছে। তার উপর প্রতিদিনই বাড়ছে বাড়তি চাপ। নুর মোহাম্মদ জানান, তাদের ক্যাম্পে যেসব নারী আশ্রয় নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত দেড়শ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে তাকে অবহিত করেছেন। বর্তমানে ক্যাম্পে ৩৫৫৬৫জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সাথে নতুন রোহিঙ্গারা যোগ হচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ। বিজিবি মহাপরিচালক শুক্রবার সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুরে যাওয়ার পর অধিনস্তদের কড়া নির্দেশনা দিয়ে যান। বিজিবি ব্যাটালিয়ন ২এর অধিনায়ক আবুজার আল জাহিদ শনিবার জানিয়েছেন, সীমান্তের ৩টি পয়েন্টে রোহিঙ্গা নিয়ে আসার সময় ৪টি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।
টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ সাংবাদিকদের জানান, সীমান্তে নজরদারীর জন্য ১০টি পয়েন্টে সাদা পোশাকে শতাধিক পুলিশ সদস্য টহল দিচ্ছে। সেই সাথে যেসব দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা নাফ নদ পারি দিয়ে নৌকা যোগে বাংলাদেশে ঢুকছে, সেসব দালালদের একটি তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে। যার সংখ্যা ৪০জন। তাদের মধ্যে ১৩জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আইন শৃংখলা বাহিনী যাই বলুক না কেন কোনও না কোনভাবে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঠিকই প্রবেশ করছে। সুপ্রভাতের তথ্যানুসন্ধ্যানেও তা বেরিয়ে এসেছে। সূত্রটি বলছে, মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের মুখে পড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। যার সংখ্যা ২০হাজারও ছাড়িয়ে যাবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।