মিয়ানমার উপকুল থেকে প্রথম দফায় উদ্ধার প্রাপ্ত ২৮৪ জন অভিবাসীদের মধ্য থেকে ১৫০ জন বাংলাদেশী অভিবাসীকে আগামীকাল সোমবার ফেরত আনা হবে। কক্সবাজার ১৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ান বা বিজিবির ঘুনধুম সীমান্ত দিয়ে এসব বাংলাদেশীদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমার কর্তৃক উদ্ধার প্রাপ্ত ৭৩৩ জন অভিবাসীকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের কাঁছাকাঁছি একাধিক স্থানে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
২১ মে মিয়ানমার উপকুল থেকে অভিবাসন প্রত্যাশি ২৮৪ জনকে মিয়ানমার কোষ্টগার্ড নৌ-বাহিনী উদ্ধার করে। উদ্ধার প্রাপ্তদের মধ্য থেকে ৮০ জনকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হলেও ২০৪ জন অভিবাসীকে উখিয়ার বালুখালী ও ঘুনধুম সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়ার ১নং বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপি ব্যাটালিয়ান হেড কোয়াটারে রাখা হয়েছিল। ইতিমধ্যে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত ও আর্ন্তজাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢেকিবনিয়া আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেওয়া অভিবাসীদের নাম- ঠিকানা সংগ্রহ করে। এসব অভিবাসীদের মধ্যে ১৫০ জন বাংলাদেশী অভিবাসী রয়েছে মর্মে নিশ্চিত হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুতের মাধ্যমে তা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত ও সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনতে সম্মতি জানিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
উক্ত অভিবাসীদের মধ্যে ১৫০ জনকে বাংলাদেশী হিসেবে রাষ্ট্রদুত সফিউর রহমান দাবী করলেও মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ২০৪ জনের প্রায় সকলে বাংলাদেশী বলে দাবী করেছেন। এসব কৌতুহল ও বির্তক সম্পন্ন না হওয়ার পরও আজ রবিবার এসব অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কথা থাকলেও তা আগামীকাল সোমবার হচ্ছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল খালেকুজ্জামান পিএসসি বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রেরিত তালিকা যাচাই বাছাই করে প্রাথমিক ভাবে ১৫০ জনকে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ঘুনধুম সীমান্তে নোম্যান্স ল্যান্ডে বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশীদের মিয়ানমার থেকে ফেরত আনার প্রস্তুতি চলছে।
মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, গত ২৯ মে মিয়ানমারের ইরাবর্তী সমূদ্র বন্দরের অদুরে সাগরে ভাসমান অবস্থায় একটি ট্রলার থেকে ৭৩৩ জন অভিবাসীদের উদ্ধারের উদ্ধারের ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। ট্রলার থেকে উদ্ধারের পর অভিবাসীদের মাছ ধরার একটি জাহাজে রাখা হয়েছিল এবং রোববার গভীর রাতে মিয়ানমার নৌ বাহিনী ও কোষ্ট গার্ড অভিবাসীদের ইরাওয়াদ্দী বা ইরাবতী থেকে সরিয়ে নেয় এবং গত বুধবার সকাল ৮ টার দিকে এসব অভিবাসীদের সীমান্ত শহর মিয়ানমারের মংডুতে আনা হয়েছিল।
উলে¬খ্য মিয়ানমার সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মূখ্যপাত্র ইয়ে হতুত বলেছিলেন, সরকার উদ্ধার প্রাপ্ত অভিবাসীদের পরিচয় যাচাই, তারা কি করতে চায় ও কোথায় যেতে চাচ্ছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেষ্টা করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের অধিকাংশই বাংলাদেশী দাবী করে হতুত বলেছিলেন তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশী, আমরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরবর্তী আয়োজনের ব্যবস্থা করছি। তবে মিয়ানমার থেকে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার প্রাপ্ত ৭৩৩ জন অভিবাসীদের মধ্যে ৫৪৬ জন বাংলাদেশী ও ১৮৭ জন মিয়ানমার নাগরিক বলে দাবী করেছে মিয়ানমারের তথ্য কর্মকর্তা সো নেয়াং। যারা দুই বা আড়াই মাস পূর্বে সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং মানবপাচারকারী ও দালালদের সহায়তায় টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল। গতকাল শনিবার মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া ও তুমব্র“ থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে বুধবার মংডুতে আনা ৭৩৩ জন অভিবাসীর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৪৫ জন শিশু ও ৭৪ জন মহিলাকে বিজিপির ঢেকিবনিয়া ১নং ব্যাটালিয়ান সেক্টরে একটি গুদামে এবং অন্যা ৬০৪ জন পুরুষকে বাংলাদেশের সীমান্তে নতুন প্রতিষ্ঠিত বাইশপাড়ি বিজিপি বিওপির প্রতিকুলে সীমান্ত থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে বিজিপির ক ক্য ডইঙ্গা নামক জনমানবহীন এলাকায় তাবুতে রাখা হয়েছে। এসব অভিবাসীদেরও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।