বিদেশে চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতে বাংলাদেশি দালালদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সৌদি আরবে ৩২৯ জন নারী শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইতিমধ্যে অসংখ্য নারী শ্রমিক দেশে ফিরলেও সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা ও দামমাম শহরে দেশে ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুণছেন এসব নারী শ্রমিক। এদিকে, তাদেরকে দেশে ফেরতের জন্য একশ্রেণির দালালচক্র পরিবারের সদস্যদের কাছে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দাবি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন ৭৫৭ জন নারী শ্রমিক যাদের মধ্যে ৫০২ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আশ্রয় নেন ৭৪ জন যাদের ৩৪ জনকে দেশে পাঠানোর বিষয়টি পক্রিয়াধীন। বাকি ৪০ জন নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের হেফাজত থেকে পালিয়ে এসেছেন। এদের মধ্যে অনেকে থাকা-খাওয়ার সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় এক মাস ধরে দূতাবাসের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও তাদের কাউকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট লেবার কাউন্সিল বিভাগের কর্মকতা আবুজারা বলেন, “আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি , উত্তরের অপেক্ষায় আছি। ” দূতাবাসের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে এক ভিকটিম অভিযোগ করে বলছেন, যদি দূতাবাস তাকে দেশে পাঠাতে না চায় তাহলে তাকে যেন দেশ থেকে টিকিট করে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
দূতাবাসে আশ্রিত নারী শ্রমিকেরা অভিযোগ করে বলেন, কাজ না পারার জন্য মালিক তাকে মারধর করে, তিনবেলা খাবারও ঠিকমতো দেওয়া না, শুধু খাবারই নয় ঠিকমতো বেতনও দেওয়া হয়নি, যৌন নির্যাতন করে এবং দিনে দিনে শারীরিক নির্যাতন বাড়তে থাকায় সেখান থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শেল্টার হোমে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক নারী শ্রমিক জানান, দেশ থেকে যে কাজের কথা বলে তাকে নেওয়া হয়েছে সেই কাজ তাকে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু তার ওপর চলছে নির্যাতন। এসব সহ্য করতে না পেরে তিন সপ্তাহ আগে ওই গৃহকর্ত্রীর বাসা থেকে পালিয়ে রিয়াদের দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের লেবার কাউন্সিলর সারোয়ার আলম বলেন , “বাংলাদেশ দূতাবাস এ পর্যন্ত ৫০২ জনকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। বাকিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। এখানে একটি কমিটি রয়েছে। সেখানে প্রথমে তাদের কাগজপত্র সাবমিট করতে হয়। ” তিনি বলেন, “কমিটিতে আমাদেরও একজন রিপ্রেজেন্টিভ রয়েছেন। প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদেরকে দেশে পাঠানো হয়। তবে চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো নারী শ্রমিক সৌদি আরবে গেলে তাকে অন্তত দুই বছর থাকতে হবে। তার আগে ফিরতে পারবেন না, ফিরতে হলে মুচলেকা দিতে হয়। “
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।