আজ ভয়াল ১৯৯১ সনের ভয়াল ২৯ এপ্রিল। এইদিনে দ্বীপ-উপজেলা কুতুবদিয়ার ওপর বয়ে যায় স্মরণকালের এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। ৪/৫ ঘন্টার স্থায়ী তান্ডবে দ্বীপের নারী-পূরুষ ও অবুঝ শিশুসহ প্রাণহারায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এই মহা দূর্যোগের ২৪টি বছর অতিবাহিত হলেও দ্বীপবাসীর মাঝে এখনো কাটেনি শোকের ছায়া। হয়ত ৯১’র আগের প্রজন্ম একদিন নি:শেষ হয়ে গেলে এটি রুপকথার গল্প হিসেবেও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বৈশাখ মাসের ভেপসা গরম। শুকনো ছিল পুকুর-খন্ডক। খাল-বিল ফেটে চৌচির। আবহাওয়ার গুমড় অবস্থা। সোমবারদিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা যতই ঘনিয়ে আসছে, বাতাসের একটানা গতিবেগ ততই বাড়তে থাকে। রেডক্রিসেন্টে কর্মীরা প্রচার করতে থাকে দূর্যোগের খবর। ১৯৬০ সনের ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘ প্রায় ৩১ বছর এতো ভয়ঙ্কর তুফান হতে পারে তা মানুষ বুঝতে পারেনি। সে কারণে তেমন আত্মরক্ষার চেষ্টা করেনি মানুষ। রাত ৮টার দিকে শুরু হয় প্রচন্ড ঝড়োহাওয়া। তখন কোথাও বেরুবার শক্তি ছিলনা মানুষের। ঠিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে তীব্র গতিতে লোকালয়ে ওঠে আসে বঙ্গোপসাগরের সমস্ত পানি। সাগর-তীর একাকার হয়ে যায় প্রায় ৩ ঘন্টা। তখন ঘরের ছাদ ও গাছ-পালায় আশ্রয় নেয় মানুষ। জোয়ার পুরান হওয়ার সাথে সাথে আকাশছোঁয়া পরপর ৩টি ঢেউ মানুষের বাঁচার শেষ আশ্রয় থেকেও ভেসে নিয়ে যায়। এভাবে সলিল সমাদিঘটে দ্বীপের ২০হাজার মানুষের। সে সাথে সমস্ত গরু-বাছুর, হাঁস-মুরগী ও জীব-জন্তুর মৃত্যুসহ বিধ্বস্ত হয় সমস্ত ঘর-বাড়ী, অফিস-আদালত, রোড-ঘাট ও দ্বীপ-প্রতিরক্ষাবাঁধ। লন্ড-ভন্ড করে দেয় দ্বীপবাসীর স্বপ্ন। ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘদিন পরেও নির্মাণ করা হয়নি টেকসই দ্বীপ-প্রতিরক্ষাবাঁধ ও পর্যাপ্ত সাইক্লোণসেল্টার। ৯১’র মতো কোন দূর্যোগের সৃষ্টি হলে আশ্রায়নের অভাবে আবারো প্রচুর প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন আলীআকবর ডেইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা জেসমিন আখতারসহ অনেকে। ঘূর্ণিঝড়ের ২দিন পরই কুতুবদিয়ায় ছুটে এসে স্বজনহারা বাকরুদ্ধ দ্বীপবাসীর খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা। এ সময় স্বজনহারা মোজাম্মেল হক কুতুবীকে সাথে নিয়ে ধানমন্ডী ৩২ নম্বর-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে আর্ত-মানবতার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন শেখ হাসিনা ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।