‘স্বপ্না আমি বাইচ্যা আছি। ক্রেন দিয়া নাইমা আসছি। তুমি এইদিকে আসো।’ বনানীর আগুন লাগা একুশতলা ভবনের ১৩ তলা থেকে বেরিয়ে আসার পর ফুটপাতে বসে মোবাইল ফোনে এসব কথা বলছিলেন আরিফ নামে এক ব্যক্তি। তিনি ১৩ তলায় ডার্ড গ্রুপের ম্যানেজার অডিট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আরিফ বলেন, ‘আগুন লাগার সময় আমাদের অফিসে ৭-৮ জন ছিলাম। আমরা পাঁচবার সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধোঁয়া আর আগুনের তাপের কারণে নামা যাচ্ছিল না। চারদিকে অন্ধকার ছিল। আমরা আবার দৌড়ে অফিসের ভেতরে ঢুকে যাই।’
আরিফ বলেন, ‘বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। অফিসের গামছা আর তোয়ালে ভিজিয়ে মুখের ওপর ধরে রেখেছি সবাই। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো বাঁচতাম না।’
আরিফ বলেন, ‘একপর্যায়ে গ্লাস ভেঙে হাতে ইশারা করতে থাকলে ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন জানালার কাছে যায়। তারপর ক্রেন দিয়ে প্রথমে আমি আর ইকবাল নেমে আসি। অন্যরা পরে নামতে পেরেছে কিনা তা বলতে পারছি না।’
বনানীর স্টার কাবারের পাশে ফুটপাতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন সেখানে উপস্থিত হন আরিফের স্ত্রী স্বপ্না। তারা দু’জন একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবার ও সহকর্মীরা পরে তাকে নিয়ে চলে যান।
বাশার নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তার অফিস ছিল ১৯ তলায়। তিনি ছাদে গিয়ে পাশের ভবনে চলে যান। পরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ২১-তলা বনানীর এফ আর টাওয়ারের নয়তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে। সেখানে আটকা পড়া অনেকেই ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্রেন লেডারের (যন্ত্রচালিত মই) সাহায্যে তাদের সেখান থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আগুন নেভানোর সুবিধার জন্য আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার কাজ করছে। পাশাপাশি সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছেন।
বাংলাট্রিবিউন
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।