কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ হঠাৎ করেই সব ধরনের চালের মূল্য বেড়েছে। চালের ধরন ভেদে কেজিতে ২ থেকে সর্বোচ্চ ২০টাকা পর্যন্ত মূল্য বেড়েছে। তবে, মূল্য বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টিতে সরবরাহ কমেছে। চাহিদা অনুযায়ী চাল আসছে না বাজারে। তাই মূল্য বেড়েছে। এদিকে, আড়তদাররা বলছেন, একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে পরিবহন খরচ বাড়ায় চালের মূল্যও কিছুটা বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব ধরনের চালের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। ৩৪ টাকা কেজি দরের মোটা চাল (স্বর্ণা) রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়।
গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া নাজির শাইল চাল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। সরু চাল নামে পরিচিত মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। পাশাপাপশি মূল্য বেড়েছে বেড়েছে সুগন্ধি চালেরও। ৯০ টাকা কেজি দরের খোলা কালিজিরা চাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কালিজিরা চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর কাওরানবাজারের কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, ‘ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। বৃষ্টিতে সরবরাহ কমেছে। এসব কারণে চালের মূল্য বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বেশি মূল্য কিনলে কম মূল্যে বিক্রি করবো কীভাবে?’ কত দরে কিনেছেন, মেমো আছে কিনা—জানতে চাইলে এরশাদ আলী বলেন, ‘আমরা মেমো আনি না।’
হঠাৎ করে চালের মূল্য বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ‘রাজধানীর বাজারগুলোয় চালের মূল্য বাড়ার বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। কিন্তু চালের মোকাম হিসেবে পরিচিত উত্তরবঙ্গের নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাটে চালের মূল্য মোটেই বাড়েনি। এই সময় চালের মূল্য বাড়ার কোনও কারণও নেই। তারপরও কেন রাজধানীর বাজারগুলোয় চালের মূল্য বেড়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়।’
লায়েক আলী আরও বলেন, ‘সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা বাজার মনিটরিংয়ের সঙ্গে জড়িত। কাজেই এসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থা যদি ঠিকমতো বাজার মনিটরিং করে, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।’
এক প্রশ্নের জবাবে লায়েক আলী বলেন, ‘পরিবহন খরচও সেভাবে বাড়েনি। কাজেই এমন অজুহাতও গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরও বলবো, যদি পরিবহন খরচ বাড়ে সে কারণে প্রতিকেজি চালের মূল্য বাড়তে পারে সর্বোচ্চ ২৫ পয়সা। এর বেশি নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নওগাঁ বা জয়পুরহাটে যে চাল আমরা ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে, সেই চাল রাজধানীতে কী কারণে ৩৭ টাকায় বিক্রি হয়? আর কুষ্টিয়ায় বিক্রি হওয়া ৪৪ টাকা কেজি দরের মিনিকেট চাল রাজধানীতে কী করে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়?’
এদিকে, জানতে চাইলে বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মী ভাণ্ডারের মালিক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, খুচরা বাজারে চালের মূল্য বাড়ার কোনও কারণ আমার জানা নেই। চালের মূল্য বাড়ার বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। পাইকারি পর্যায়ে আমরা মূল্য বাড়াইনি। খুচরা বাজারে তো আমাদের কোনও হাত নেই।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রাক মালিক সমিতির (সায়েদাবাদ) সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘বগুড়া, নওগাঁ বা জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় ট্রাক ভাড়া আগের মতোই আছে, বাড়েনি। চালের মূল্য কেন বেড়েছে, তা আমরা জানি না। আমরা দেশের কোনও অঞ্চলের ট্রাক ভাড়াই বাড়াইনি। এছাড়া, ট্রাক ভাড়া বাড়ানো বা কমানোর বিষয়টি কারও হাতে নেই। চাহিদার ওপর নির্ভর করে ট্রাক ভাড়া বাড়ে-কমে।’
এ বিষয় জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে সরকারের মনিটরিং টিম কাজ করছে।’ কারসাজি করে কেউ চালের মূল্য বাড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।