এ এইচ সেলিম উল্লাহ:
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠেছে। ইয়াবা, মানবপাচার, মারধরসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। সাধারন লোকজনের পাশাপাশি শনিবার রোহিঙ্গা দম্পতির মারধরের শিকার হয়েছে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে কর্মরত এ উপ-পরিদর্শক (এস আই)। রোহিঙ্গা শিবির এলাকা থেকে বস্তা বন্ধি লাশ উদ্ধার, রোহিঙ্গাদের হাতে রোহিঙ্গা খুন, রোহিঙ্গাদের হামলায় আহত ব্যক্তির মৃত্যুসহ গত এক মাসে নানা ঘটনা জন্ম দিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবাসহ ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা। এমনকি তাদের কবল থেকে রেহায় পেতে এক এনজিও কর্মী গাছে উঠে পড়ার ঘটনাও রয়েছে। অনেকেটা রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয় লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গারা অবাধে বাংলাদেশী সিম ব্যাবহার করার কারনে নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টম্বর রোহিঙ্গাদেও হামলায় উখিয়ার পালংখালি এলাকার মুরগির খামার ব্যবসায়ি জমির উদ্দিন আহত হয়। গত ১৬ সেপ্টম্বর উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের হামলায় রোহিঙ্গা খুনের ঘটনা ঘটে। যেই সংবাদটি বিদেশী গনমাধ্যও স্থান পায়। ৭ অক্টোবর কুতুপালং এর রোহিঙ্গা বস্তি লাগোয় খাল থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৮ অক্টেবর কুতুপালং এ ত্রাণের টোকেন বিতরন করতে গিয়ে মুক্তি নামের এনজিও কর্মী রোহিঙ্গাদের কবল থেকে বাচতে গাছে উঠে পড়ে। গত ১৯ অক্টোবর মহিষ বিক্রিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোছনের ছেলে ধলাইয়া ও কালাইয়ার সাথে কথা কাটাকাটি হয় স্থানীয় আবু সিদ্দিকের। এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা দুই সহোদর ক্ষুদ্ধ হয়ে আবু ছিদ্দিককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় আবু ছিদ্দিককে প্রথমে টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতাল ও পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। ২১ অক্টোবর ভোর ৬ টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। নিহত ব্যক্তি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব লেদার মৃত কালা চাঁনের ছেলে। সর্বশেষ গত শনিবার টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে রোহিঙ্গা নারী দিল বাহার ও তার স্বামী সৈয়দ আহমদ অবৈধভাবে একটি মুদির দোকান স্থাপন করার চেষ্টা করে। এসময় ক্যাম্পে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকান নির্মাণে বাঁধা প্রদান করলে প্রথমে তর্কাতর্কি ও পরে বিবাধে জড়িয়ে পড়ে। এসময় সিভিল পোষাকে থাকা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এঘটনায় ওই ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই কবির আহত হয়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত পুলিশের এসআই কবির আহমদ নয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। এছাড়্ াইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ইয়াবা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়ছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের ভারে উখিয়া টেকনাফ জর্জরিত হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয় লোকজনের এখন ঘর থেকে বের হওয়াই দায় হয়ে পড়েছে। তার উপর তারা নানা অপরাধ কর্মকা- ঘটাচ্ছে। এতে স্থানীয়দের জীবন চরম নিরাপত্তা হীনতায় পড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে রোঙ্গিহারা আরো বড় ধরণের বিস্ফোরণ ঘটাতে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
টেকনাফ থানা দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শেখ আশরাফুর জামান জানান, শনিবার পুিলশের উপ-পরিদর্শক এসআই কবির আহমদেও উপর রোহিঙ্গাদের হামলার ঘটনা নিয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় রোববারসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় কাজ করতে গিয়ে পুলিশের দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। আবার সেখানেই হামলার শিকার হতে হচ্ছে পুলিশকে। এর বড় সমস্যা আর কিছু হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের অবৈধ কার্যকলাপে উখিয়ার সামগ্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হতে চলেছে। তিনি এসব রোহিঙ্গাদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য আইন প্রয়োগকারি সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া চলাচলের উপর কঠোর নজরদারি রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। এরপরও যদি রোহিঙ্গাদের হাতে হামলার শিকার হতে হয় তাহলে এটা বড়ই নির্মম। রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। রোহিঙ্গারা যাতে কোনো অপরাধ কর্মকান্ঢ ঘটাতে না পারে সে জন্য পুলিশ অত্যন্ত কঠোর নজরদারি রেখেছে।
প্রসঙ্গত: গত ২৫ আগষ্ট থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গা। এরা সবাই টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। পুরাতনসহ এখন উখিয়া-টেকনাফে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয় লোকজন কোনোঠাসা হয়ে পড়েছে। আবার তাদের হিং¯্রতার শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।