টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়িতে ব্যাপক হারে চলছে গ্রেপ্তার বাণিজ্য। গত এক সাপ্তাহর ব্যবধানে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, এস.আই শেফায়ত হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন শেষে টেকনাফ থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়িতে এস.আই রিপন কুমার দাস কে ফাড়ির ইন্চার্জ হিসাবে স্থায়ি ভাবে নিয়োগ দেয়। গত ৭ ডিসেম্বর এস.আই রিপন ফাড়িতে যোগদানের পর হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন পেশার মানুষ কে অপরাধী সাজিয়ে মোটা অংকের টাকা নিতে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের মিশনে নামে। গত ১০ ডিসেম্বর রাতে হোয়াইক্যং বাজার এলাকা থেকে বাজার কমিটির সদস্য ও এক ব্যাবসায়ীকে ইয়াবা নিয়ে চালান দেব বলে পরে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে উক্ত ব্যাবসায়ী কে গাড়ী তে তুলে নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এর পর মৌলভী বাজার ষ্টেশন শেষে ওয়াব্রাং মসজিদের পাশে গিয়ে গাড়ী থামায়। তখন এস.আই রিপন আটককৃত ব্যাক্তি কে অস্ত্র উচিয়ে জীবন চাও, না টাকা চাও বলে বলে হুমকি দেয়।এক পর্যায়ে ২লাখ টাকা মুক্তিপন দেয়ার চুক্তি তে তাকে ছেড়ে দেয়। ১১ ডিসেম্বর রাতে উক্ত ২লাখ টাকার মধ্যে হোয়াইক্যং বাজারের প্রমীত প্লাজার ২য় তলায় এক অফিসে বসে জনসম্মুখে ১লাখ টাকা নেয়। বাকি ১লাখ টাকা হোয়াইক্যং পুলিশ ফাড়িতে এস.আই রিপনের রুমে নিয়ে আদায় করে। এর পর ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে আটক করা হয় নয়াপাড়ার বাইন্নার টুড়া নামক গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার এর ভাতিজা মানিকের ভাই জাফর আলম কে। স্থানিয় এক মেম্বার তদবীর করে এস.আই রিপন কে নগদ ১লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। ১৩ ডিসেম্বর রাতে আটক কওে হোয়াইক্যং বাজারের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী টপ কাশেমের বড় ভাই বাজারের সাবেক পাহারাদার মোঃ ইসুআলীর পুত্র আমির হামজা কে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে ধরে নিয়ে যায়।পরে মোটা টাকার উৎকোচ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। ১৪ ডিসেম্বর সকালে এক নিরীহ প্রবাসী জরুরী কাজে কক্সবাজার যাওয়ার পথে হ্নীলা উলুচামরী কুনাপাড়ার দরবেশ আলীর পুত্র প্রবাসী দিদারুল আলম কে গাড়ী থেকে নামিয়ে শরীরে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। এক পর্যায়ে তার কাছ থেকে এস.আই রিপন ২লাখ টাকা উৎকোচ দাবী করে। টাকা না দেয়ায় তাকে আটক রাখে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত। খবর পেয়ে তার এক আত্বিয় উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা বিষয়টি বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতাদের অবহিত করলে ছাত্রলীগের ১০/১২জন নেতা স্বশরীরে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাড়িতে বিনা কারনে দিদার কে আটক রাখার রহস্য জানতে এস.আই রিপন এর অফিসে আসে। তখন না ছোড় বান্দা এস.আই রিপন চেয়ার টেবিলের জন্য টাকা দরকার বলে ২০ হাজার টাকা নেয়। টাকা পাওয়ার পর দিদার কে ছেড়ে দেয়। একই দিন দুপুর ২টায় হোয়াইক্যং বাজার এলাকা থেকে হোয়াইক্যং তুলাতলীর এক নব্য ঠিকাদার কে মোটর সাইকেল সহ তুলে নিয়ে যায় সিএনজি করে। মোটর সাইকেল ফাঁড়িতে রেখে তুমাকে ওসি সাহেব যাইতে বলছে, এই বলে ফাড়ি থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। সিএনজির উপর শুরু করে দরকষাকষি। প্রথমে ১০ লাখ টাকা দাবী করে তার কাছে। পরে নাইক্ষ্যং খালী ব্রীজের কাছে গিয়ে ১০ লাখ টাকা থেকে ২লাখ টাকায় রাজি করায় এসআই রিপন । তখন এস.আই রিপন আটককৃত ব্যাক্তি কে বলেন, ভাই আমার এসপি,ডিআইজি সহ সাংবাদিকদের ও টাকা দিতে হয়।
হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়িতে আসতে ৪/৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে সমস্যা আছে। উপরে ঠিক সব কিছু ঠিক। ১৩ ডিসেম্বর রাতে হোয়াইক্যং কেরুনতলী থেকে জনৈক আব্দু ছোবহান,মোঃ ইয়াছিন, হাফেজ শমসুল আলম ও নরুল বশর কে ধরে নিয়ে আসে তাদের ফাড়ির হাজতে রেখে ৪০ হাজার টাকা দাবী করে। তারা ১০ হাজার টাকায় সম্মত হলে তাদের কে এখনো আটক রাখা হয়। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তরা হাজতে ছিল। এভাবে এস.আই রিপন আইসি হিসাবে হোয়াইক্যং এ যোগদান করার পর পুলিশের ওসি সহ বিভিন্ন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে গ্রেপ্তার বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
হোয়াইক্যং বাজার কমিটির সভাপতি ও হোয়াইক্যং আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা আলমগীর চৌধুরী বলেন, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়িতে যে হারে গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলছে, তা পুলিশ বিভাগের চরম ভাবে ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের উচিত এব্যাপারে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া। অভিযুক্ত এসআই রিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার বার মোবাইলে কথা না বলে সংযোগ কেটে দেন।
এ ব্যাপারে কথা বলা হলে টেকনাফ থানার অফিসার ইন্চার্জ আব্দুল মজিদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ যে কেউ থানায় অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে এএসপি (উখিয়া সার্কেল) মোঃ আব্দুল মালেক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সঠিক হয়ে থাকলে এধরনের কাজের জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তবে বিষয়টি পুলিশ সুপারের নলেজে দিলে ভাল হবে।#
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।