নিজস্ব প্রতিবেদক:
সামনে ওয়ার্ডের মেম্বার পদে উপ-নির্বাচন। আগে থেকেই সমাজ সেবায় কাজ করে আসায় লোকজনের পরামর্শে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এটি কাল হয়েছে তার জন্যে। তথ্যটি এলাকায় প্রচার পাবার পরই অন্য প্রার্থী ও তার স্বজনরা তাকে অংকুরে বিনষ্ট করতে মাঠে নামে।
পরিকল্পনা মতো থানার সোর্স পরিচয়দানকারি একই ওয়ার্ডের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন ওসি। তা না পেয়ে ৩ হাজার ইয়াবা দিয়ে মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে টেকনাফের সাবরাং ২ নম্বর ওয়ার্ডের কোয়াংছড়িপাড়ার মৃত আমির হোসেনের ছেলে মুদি দোকানি এজাহার মিয়াকে (৩৭)।
এসব কথা উল্লেখ করে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেল’র এআইজির কাছে আবেদন করেছেন কারন্তরিণ ব্যবসায়ীর ছোট ভাই খুইল্যা মিয়া। আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে আইজিপি, চট্টগ্রামের ডিআইজি ও কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কাছে। সোমবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় তিনি ডাকযোগে এসব অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, পারিবারিক ঐতিহ্যে মুদিদোকান, মাছধরার বোট ও মাছের ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করেন ব্যবসায়ী এজাহার মিয়া। এছাড়া মেরিনড্রাইভ সড়কে কিছু জমিও রয়েছে- যা দিয়ে স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করার পাশাপাশি সমাজসেবায় এলাকায় তার খ্যাতি রয়েছে। তাই সদ্য শূন্য হওয়া ২নম্বর ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। সমাজসেবা ও উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হওয়াকে ভাল চোখে নেননি এলাকার খুইল্যা মিয়ার
ছেলে থানার সোর্স হিসেবে পরিচিত ছিদ্দিকের। কারণ ছিদ্দিকও সম্ভাব্য প্রার্থী এবং গতবারের নির্বাচনে তিনি পরাজিত প্রার্থী। অন্যদিকে সম্প্রতি ভিজিডি কার্ড বিতরণ নিয়ে স্থানীয় চৌকিদার ছৈয়দ আলমের সাথেও কারান্তরিণ এজাহার মিয়ার দ্বন্দ্ব হয়। সব মিলিয়ে ছিদ্দিক স্থানীয় আমিন ও চৌকিদার ছৈয়দসহ একটি সিন্ডিকেট হয়ে ব্যবসায়ী এজাহার মিয়াকে ফাঁসানোর চাল চালেন।
আর টেকনাফ থানার ওসি রনজিত বড়ুয়াকে দিয়ে সেই চাল পূর্ণ করেন।
ব্যবসায়ী এজাহার মিয়ার স্ত্রী হাসিনা খাতুন জানান, ৩০ জুলাই সারাদিন দোকানদারী ও মানুষের কিছু সালিশ করে মাগরিবের নামাজের পর বাড়ি ফিরেন তিনি। হঠাৎ করে সিভিল পোশাকধারী একদল পুলিশ এজাহার মিয়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তাকে মারধরও করেন তারা। মূলত ছিদ্দিক ও চৌকিদার ছৈয়দ আলম মিলে পুলিশের সাথে আতাঁত করে পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসিয়েছে। আর খুইল্যা মিয়া জানান, এজাহার মিয়াকে ধরে নিয়ে যাবার পরপরই থানার সোর্স
ছিদ্দিক ও মো. আমিন থানার ওসির নাম দিয়ে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে ইয়াবাসহ আটক দেখিয়ে মাদক মামলায় জেলে পাঠানো হবে বলে জানায়। এরপরও টাকা দিতে অস্বীকার করেন পরিবারের লোকজন। পরে থানায় গেলে সেখানে ওসিও ১০লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে ইয়াবা ছাড়া আর না দিলে ইয়াবাসহ চালান করা হবে বলে জানান। সাথে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু ইয়াবার সাথে কোনো ধরণের সংশ্লিষ্ট না থাকা এবং আগের কোনো ধরণের মামলা ও অভিযোগ না থাকায় টাকা দিতে অস্বীকার করেন তারা। পরিবারের ধারণা ছিল
ইয়াবাসহ চালান দেয়ার বিষয়টি ‘ভয় দেখানো’। তবে টাকা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ৩ হাজার ইয়াবা দেখিয়ে এজাহার মিয়া ও মো. রফিক নামে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের অপরিচিত এক ব্যক্তিকে আসামী করে একটি মাদক মামলা দিয়ে ৩১ জুলাই আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
খুইল্যা মিয়া আরো বলেন, যে ছিদ্দিক থানার সোর্স তার আত্মীয়ের বোট থেকে সাত লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছিল কোস্টগার্ড এবং রোহিঙ্গা সহযোগীসহ ইয়াবা নিয়ে আটকও হয়েছিল তার ওই আত্মীয়। ছিদ্দিক থানায় বসে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। একই সাথে ভয় দেখিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা তুলে। চাঁদা না পেয়ে নিরীহ লোকজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। তিনি বলেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে ইয়াবার গডফাদারদের তথ্য দিবেন তিনি।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত বড়ুয়া বলেন, এজাহার মিয়া একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।