মাঠপর্যায় থেকে ২০ মের মধ্যে যাচাই-বাছাই করা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) না পৌঁছালে আগামী অর্থবছর থেকে সম্মানী ভাতা বা উৎসব ভাতা দেওয়া হবে না। এই সময় পর্যন্ত যেসব তালিকা জামুকাতে পৌঁছাবে, সেই হিসাব করেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এরপর কেউ বাদ পড়লে সেই দায়দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নেবে না।
এসব বিষয় জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ১৯৭টির প্রতিবেদন জামুকা কার্যালয়ে পৌঁছেছে। নাম প্রকাশ না করে বেশ কয়েকজন ইউএনও প্রথম আলোকে বলেছেন, যাচাই-বাছাই নিয়ে যে জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে কোনোভাবেই যাচাই-বাছাই শেষ করে ২০ মের মধ্যে তালিকা পাঠানো সম্ভব হবে না।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় এ মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যা পাঠাতে বলেছে। আমরা যে সংখ্যা দেব, সে অনুযায়ী তারা বাজেট বরাদ্দ দেবে। এখন আমরা তো আর ভুল তালিকা বা সংখ্যা বাড়িয়ে কোনো তালিকা পাঠাতে পারি না। সঠিক তালিকা নির্ধারণ করা হবে যাচাই-বাছাই করা তালিকার ভিত্তিতে। পাঁচ মাসেও যদি এই তালিকা না দিতে পারে, তবে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই।’
মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, মুক্তিযোদ্ধার পুরোনো তালিকায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং যাঁরা নতুন করে সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ জানুয়ারি একটি গেজেট প্রকাশ করে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে জমা পড়ে প্রায় দেড় লাখ আবেদন। এ ছাড়া প্রতিদিনই আবেদন আসছে। সারা দেশে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি কাজ শুরু করে ২১ জানুয়ারি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই নিয়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আর কে ভুয়া; নতুন করে কারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন, সেটা যাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন তাঁদের কারও কারও বিরুদ্ধেও উঠেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ। এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগও আছে। কমিটি এবং যাচাই-বাছাই নিয়ে আছে পক্ষ-বিপক্ষ ও বিরোধ। এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
গত সোমবার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর জেলা ইউনিটের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির পদে বারবার পরিবর্তন করায় যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার আবার যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, যশোরের চৌগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুর হোসেন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বিএনপি-জামায়াতপন্থী। তিনি অর্থের বিনিময়ে পাঁচজনকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত করেন। অবশ্য আবদুস সালাম বলেছেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি ভুয়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে রিট করায় বেশ কয়েকজনের ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।
শেরপুরের নকলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বিএলএফের (মুজিব বাহিনী) নুরুজ্জামান।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে গুরুতর অনিয়ম ও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযাগ রয়েছে, যাচাই-বাছাই শেষে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে উৎকোচের বিনিময়ে বিতর্কিতরা স্থান করে নিয়েছেন। আর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মাঠের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের। তবে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি জেলা ডেপুটি কমান্ডার আবদুল মান্নান বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটি সঠিক নিয়মকানুন মেনেই যাচাই-বাছাই করেছে।
সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় মাঠপর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীও। তবে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের তালিকা চূড়ান্ত নয়। শেষ পর্যন্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বাদ যাবেন না আর ভুয়ারা টিকতে পারবেন না।
সূত্র- প্রথম আলো
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।