হোয়াইক্যংয়ের এক ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী। তার নাম মাহবুব আলম। বয়স ২৬, আইডি কার্ড মতে তার বয়স ২৯। ১৯৮৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী তার জম্ম। আজ থেকে ২১ বছর আগে তার মাতা নুর জাহানের সাথে শেষ দেখা। তাও পার্বত্য এলাকার রাঙ্গামাটিতে। মাহবুব আলম জানেনা তার গর্ভধারিনী মা কে, কোথায় ?
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ২নং ওয়ার্ডের মৃত মোহাম্মদ মিয়ার পুত্র মাহবুব আলম (২৬) পেশায় একজন পিয়াঁজু বিক্রেতা। বর্তমানে ২ সন্তানের জনক। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বসবাস করছে হোয়াইক্যং বাজারের পশ্চিমে আধারীছরা নামক জায়গায়। তার পিতা মোহাম্মদ মিয়া গত ৫ বছর পূর্বে হোয়াইক্যং আমতলী সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে মারা যায়। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মাহবুব আলমের পিতা মোহাম্মদ মিয়ার আসল বাড়ী উখিয়া উপজেলার ফালংখালীর গয়াল মারা পাহাড়ী এলাকায়। গয়াল মারা থেকে মোহাম্মদ মিয়া ১৯৮২ সালে চাকুরী বা কাজ কর্মের সন্ধানে পাড়ি জমায় পার্বত্য চট্রগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী বাজারের পাশে হাজ¦ী পাড়া নামক গ্রামে। অবশেষে রাঙ্গামাটিতে মোহাম্মদ মিয়ার মাথাগোঁজার ঠাই হয়। এতে রাঙ্গামাটির উক্ত গ্রামের নুরজাহান নামক এক মেয়ে কে বিয়ে করে। মোহাম্মদ মিয়ার সংসারে ২ ছেলে,এক মেয়ের জম্ম হয়। মেয়ে রেহেনা খাতুন সবার বড়। মাহবুব আলম ২য় ছেলে। আরেক ভায়ের নাম সাইফুল আলম ওরফে শাপুল আলম। বিয়ে করার পর মাহবুব আলমের পিতা মোহাম্মদ মিয়ার জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। মাহবুব আলমের মরহুম পিতা মোহাম্মদ মিয়ার সাথে স্ত্রী নুরজাহানের সাথে পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো বার বার। একদিন মাহবুবের পিতা মোহাম্মদ মিয়া জুম চাষে যাওয়ার জন্য তৎকালের শিশু সন্তান মাহবুব কে সাথে নিয়ে পাহাড়ে যায়। ক্ষেতের নানা প্রজাতির ফল মূল বাজারে বিক্রি করে জোগাড় হয় ৪/৫শত টাকা । উক্ত টাকা নিয়ে মোহাম্মদ মিয়া ৪ বছরের শিশু মাহবুব কে সাথে নিয়ে ধেয়ে আসে হোয়াইক্যং বাজারে। এর পর দৈংঘাকাটা নামক গ্রামের এক আত্বিয় রশিদ আহমদ বাপ বেটা তথা মোহাম্মদ মিয়া ও শিশুপুত্র মাহবুব কে আশ্রয় দেয়। এ বাড়ীতে বসবাস করে ধীরে আস্তে বেড়ে উঠে মাহবুব। শিশুকিশোর কাল অতিক্রম করে মাহবুব যৌবনে পদার্পন করার পর ২০০৪ সালে হোয়াইক্যং মুলা পাড়ার মৃত্যু কাশেম এর মেয়ে আয়েশা কে বিয়ে করে। বর্তমানে মাহবুবের সংসারে ১ছেলে, ১মেয়ে। ২ছেলে সন্তান সন্ততীর প্রতি পিতা হিসাবে তার আদরের যেন শেষ নেই। ২ছেলের জনক হওয়ার পর মাহবুব বুজতে বাকি নেই ছেলে মেয়ের প্রতি মা বাবার কত দরদ! আমার মা’ও আমায় প্রসবের পর আদর সোহাগ,¯েœহ,মায়া,মমতা দিয়ে আমাকে বড় করেছে। কোথায় আমার গর্ভধারিনী মা ? এই বলে গত কয়েক বছর থেকে তার বোবা কান্না যেন থেমে নেই। দ’ুচোখের পানির যেন বন্যা। প্রতি মুহুর্ত এখন তার কল্পনা শুধু তার মায়ের জন্য। বাংলাদেশের কোথায় গেলে তার আদরের ভান্ডার একমাত্র মা’কে খুজে পাবে। তার মা নুর জাহান আদৌ বেচে আছে ? না তার মৃত্যু হয়েছে তা ও নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। মাহবুবের খুবই নিকটাতী¡য় (চাচা) দৈংঘা কাটার পিয়ার মুহাম্মদের পুত্র রশিদ আহমদ (৬০) জানান, মাহবুব ও তার পিতা মোহাম্মদ মিয়া রাঙ্গামাটি থেকে আসার পর আমার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে ভিটেবাড়ী না থাকায় অসহায় মাহবুবের পিতা কে হোয়াইক্যং আশ্রয় কেন্দ্রের একটি ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়। মাহবুব হোয়াইক্যং আশু সওদাগরের চার দোকানে, পরে টেকনাফ,কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি খাবার হোটেলে চাকুরী করে পরিবারের চাহিদা মেটাতো। প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মাহবুব আলম সে আশাবাদী তার মা এখনো বেচে আছেন। তার দেয়া তথ্য মতে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী বাজারের পাশে হাজ¦ী পাড়া নামক গ্রামের মুফিচ্চা বা মজিত্তা বা নামক ব্যাক্তির বাড়ির পাশে থাকতে পারে। উক্ত বাড়ির ২ ছেলের নাম আমার জানা আছে। তারা হচ্ছে বড় ছেলে সেলিম ও জসিম। বর্তমানে মাহবুব আলমের স্বপ্ন,আশা আকাংকা শুধু মাকে খুঁেজ পাওয়ার ! হতভাগা মাহবুব মার খুজে ছুটে যাবে রাঙ্গামাটির মায়ের দেশে। মাহবুবের আর্তি, একবার এসে দেখা দাওগো মা, ওগো মা.. তুমি এই ধারারই শ্রেষ্ট নেয়ামত ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।