চ ধাপে শেষ হলো পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৪৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ৪৫৫টি উপজেলার মধ্যে ৩০২টিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ৯৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান। ভোটের মাঠে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন ২০৫ জন । বাকি ১৫৩টি উপজেলার ১৪৫টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন; যাদের মধ্যেবেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ৩ টিতে, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টিতে এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে অনিয়ম, উচ্চ আদালতের রায়, নির্বাচনী পরিবেশ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে কয়েকটি উপজেলার ভোট ও ফল স্থগিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনের শুরু থেকেই ভোট কেন্দ্রে ভোটার অনুপস্থিতির বিষয়টি ছিল আলোচিত। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনে ভোট পড়ার হার কম বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৪১ শতাংশ ভোটগ্রহণের পর তা ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে চতুর্থ ধাপে ৩৬ শতাংশে নেমে আসে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত শেষ ধাপের নির্বাচনে ভোটের হার আগের ধাপের চেয়ে সামান্য বেড়েও ৩৯ শতাংশে আটকে যায়। ইসি দেওয়া হিসাবে দেখা যায়, গড়ে ভোট পড়েছে ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, এই হার আরও কম।
এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৯ জন। ভোট দিয়েছেন ২ কোটি ৫৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮৮ জন; যা মোট ভোটারের ৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পাঁচ ধাপে বাতিল ভোট পড়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮২০টি। যা প্রদত্ত ভোটের ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েক কোটি ভোট বাতিল হয়েছিল। সে তুলনায় এবার ভোট বাতিল হওয়ার হার অনেক কমেছে।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গত মার্চে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫টির ফলাফল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৩৩টির ভোট ও ফল বিভিন্ন কারণে স্থগিত রয়েছে। প্রথমবারের মতো ১৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ট্যাব ব্যবহার করা হয়েছে।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের বাজেট ছিল ৯১০ কোটি টাকা। বাজেটে নির্বাচন পরিচালনা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বরাদ্দ ছিল ৭৪০ কোটি টাকা।ইভিএম পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৭০ কোটি টাকা। পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালে ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বাজেট ছিল ৪০০ কোটি টাকা। এবার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বাজেট বরাদ্দ হলেও এ নির্বাচন ঘিরে মানুষের আগ্রহ ছিল তলানিতে, ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার অনুপস্থিতি থেকে এর প্রমাণ মিলে।
কমিশন সচিবালয়ের তথ্যানুসারে, ১৯৮৫ সালের ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ১৪ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। এরপর বিএনপি সরকার ক্ষমতা এলে স্থানীয় সরকার পরিষদের এ নির্বাচন দীর্ঘকাল বন্ধ ছিল। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি দেশের ৪৮০টি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালের ১৫ জুন ৪৭৮টি উপজেলা পরিষদের নারীদের জন্য সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন হয়।
ধাপভিত্তিক ফলাফল: ১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৩টিতে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। যার মধ্যে ৫জনই আবার বিনাপ্রতিদ্বদ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৯জন। ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।
৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপে ১০৬টি উপজেলার মধ্যে ৭৩টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯জন নির্বাচনের মাধ্যমে ও ২৪জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩২ জন। একটিতে জাতীয় পার্টি জেপির প্রার্থী জয় পেয়েছেন। ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ভোটে ১২২টি উপজেলার মধ্যে ৮৩টিতেই জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এর মধ্যে ৩১জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ৫০জন প্রতিযোগিতা করে জয় পেয়েছেন। এছাড়া এ ধাপে ৩৮জন স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন। জাতীয় পার্টির একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ১২৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭৭টিতে আওয়ামী লীগ, ৪৩টিতে স্বতন্ত্র, দু’টিতে জাতীয় পার্টি ও একটি বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৭৭ প্রার্থীর মধ্যে ৫৫জন ভোটের লড়াইয়ে ও ২২জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মজিবর রহমান মজনু আনারস প্রতীক নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ৮২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ৫৬টিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আর স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন ২৩জন। আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৪২জন ভোটে লড়াই করে ও ১৪জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। হবিগঞ্জের মাধবপুর, জামালপুরের বকশীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম ধাপে ভোট পড়ার হার ছিলো ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।