পর্দার আড়ালে নির্বিঘ্নে ইয়াবা ব্যবসা চালাতে তিনি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে সে জন্য সবার সঙ্গে ভালো আচরণের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করতেন। কৌশলে বাগিয়ে নিয়েছিলেন কক্সবাজার যুবদল সহসভাপতির পদটিও। গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি চশমা প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছেন। প্রথমে ফেনসিডিল পরে ইয়াবা ব্যবসা করে বহু টাকার মালিক বনে গেছেন। ইয়াবা ব্যবসা করে গাড়ি কেনার কথা তিনি নিজেই পুলিশকে জানিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থেকে গ্রেফতার নেজাম উদ্দীনের (৩৮) কথাই বলছিলাম। তিনি এখন সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে। প্রথমদিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা বলেছেন। তার গ্রেফতারের খবরটি এখন টক অব দ্য কক্সবাজারে পরিণত হয়েছে।
এক লাখ পিস ইয়াবাসহ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হন নেজাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার স্বামীবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ওইদিন বিকালেই গ্রেফতার করা হয় তার সহযোগী শ্রী শীপক মল্লিক ওরফে বুরংকে (৪৫)। শুক্রবার গভীর রাতে এই দু’জনসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে সিটিটিসি। অন্য আসামিরা হল : ইউসুফ (৩৭) এবং রানা (৩২)। সিটিটিসির এসআই শাহীনুল ইসলাম জানান, শনিবার নেজাম এবং বুরংকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডের প্রথম দিনে নেজাম উদ্দীন জানান, আগে তিনি ফেনসিডিল ব্যবসা করতেন। ২০০২-০৩ সালে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের সদস্যরা টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা এনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। উদ্ধারকৃত প্রাইভেট কারটিও তারা ইয়াবা বিক্রির টাকায় কেনা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম জানান, নেজাম একজন পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসাকে নির্বিঘœ করতেই নেজাম ছদ্মবেশে ভালো মানুষ সেজেছেন। কক্সবাজার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মনজুমন নাহারের ছেলে নেজাম। বিএনপির সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজলের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন তিনি।
ইয়াবাসহ নেজাম উদ্দীনের গ্রেফতারের খবরটি ‘টক অব দ্য কক্সবাজার’-এ পরিণত হয়েছে। সবারই প্রশ্ন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি, অমায়িক, বন্ধু ও কর্মীবান্ধব লোকটি এমন কাজ করতে পারেন? এটি নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা। গত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন তিনি। বছর দুয়েক আগে তিনি নিরিবিলি গ্রুপের মালিকানাধীন হোটেল নিরিবিলির নিচ তলায় ‘ক্যান টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ নামে একটি এজেন্সি চালু করেন। এ অফিসে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার ইউপির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন জিকু এবং টেকনাফের ইউনূছসহ আরও বেশ কয়েকজন নিয়মিত বসতেন।
স্থানীয় যুবদলের একাধিক নেতা জানান, ছাত্রদলে থাকাকালীন সময় থেকেই মাদক বিকিকিনিতে জড়িত ছিলেন নেজাম। জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর মাদক বিকিকিনির সাম্রাজ্যে বাড়ান তিনি। অত্যন্ত সতর্কতার মাধ্যমে তিনি মাদক সরবরাহ এবং টাকার লেনদেন করতেন। নেজাম গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তার সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে। এদিকে নেজামের গ্রেফতারের বিষয়টি যড়যন্ত্র হতে পারে উল্লেখ করে নেজামের মা কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর মনজুমন নাহার বলেন, আমার ছেলে এসবের সঙ্গে কখনও জড়িত ছিল না। তার আচার-ব্যবহার আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখেছেন। এটি কারও ষড়যন্ত্র হতে পারে। কক্সবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি ছৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল বলেন, এটি কল্পনারও অতীত। আমরা খুবই বিব্রত।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।