রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ধরে নেয়ার ৮৪ ঘণ্টা পরেও তার খোঁজ মিলছে না। উত্তরার ওই বাসার কেয়ারটেকার আক্কাস আলীর ভাষ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে ডিবির লোকজন তাকে গেট খুলতে বললেই তিনি খুলে দেন। পরে মুখে গামছা বেঁধে সালাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায় গোয়েন্দারা। তখন আক্কাস আলীর কাছে সাদা পোশাকের লোকেরা নিজেদের ডিবি পুলিশ বলেও পরিচয় দেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সালাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর শনিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত ৮৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও তার অবস্থানের কোনো তথ্য সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিতে পারেনি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের আটক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্বীকারের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ কোথায় আছেন কেমন আছেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার ও নেতাকর্মীরা। এদিকে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে চান। তিনি বলেন, আমার স্বামী গণমানুষের রাজনীতি করে। আমি আদালতের দারস্থ হয়েছি। আমার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়।
স্বজনরা জানান, তারা শুক্রবারও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কেউই তাদের আশ্বস্ত করেনি। তারা আরও জানান, বাসার কেয়ারটেকারের কাছে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। তারপরও সংস্থার পক্ষে অস্বীকার করায় তারা শংকিত।
চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি তথা ও ২০ দলীয় জোটের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিলেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তার সন্ধানে কয়েকদিন ধরেই গোয়েন্দারা তৎপর বলে জানায় পরিবার ও স্বজনরা। ঘটনার রাতে তাকে গ্রেফতারের আগে দুই গাড়ি চালকসহ ৩ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে একদল সাদা পোশাকধারী লোক উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। স্বামীর কোথাও খোঁজ না পেয়ে পরের দিন সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ গণমাধ্যমের কাছে এ অভিযোগ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চলমান আন্দোলনে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পাওয়ার পর সালাহ উদ্দিনের পরিবারের অন্য সদস্যরাও ছিলেন গোয়েন্দাদের নজরে। ঘটনার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরের দিনই উত্তরার ওই বাড়ির মালিক ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তিনি দুবাই প্রবাসী বলে জানা গেছে।
উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি রোডের ৪৯/বি বাড়ির কেয়ারটেকার আক্কাস আলী আক্তার বলেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন সাহেবকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই তিনি দেখেছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার আনুমানিক রাত সোয়া ৯টায় সাদা তিনটি মাইক্রোবাস হঠাৎ বাড়ির সামনে থামিয়ে প্রায় ২৫-৩০ জন সাদা পোশাকধারী লোক গাড়ি থেকে নামেন। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা আমাকে পিস্তল দেখিয়ে গেট খুলতে বলেন। ভয়ে আমি তৎক্ষণাৎ গেট খুলে দিই, তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলে তোমার কোনো ভয় নেই। পরে তারা বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন সাহেবকে চোখ বেঁধে নিয়ে যান। আক্কাসের ভাষ্য অনুযায়ী, দোতলায় প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই ওনাকে একটি গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে দুজনে দুহাত ধরে নামিয়ে আনেন। পরে তকে গাড়িতে তোলা হয়।
স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তিন দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ, র্যাব ও ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থাই এর দায় স্বীকার করছে না। প্রতিটি সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, সালাহ উদ্দিন আহমেদ নামে কাউকে আটক করা হয়নি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এভাবে একজন মানুষকে তুলে নিয়ে যাবে অথচ কেউ কিছু বলবে না। এটা কিভাবে হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে যে অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে অবস্থায় এবং অক্ষতভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। অথবা তাকে আদালতে হাজির করা হোক।’
বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরের পুলিশ স্টাফ কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক বা গ্রেফতার করেনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।