বিশেষ প্রতিবেদকঃ এক সাথে ৯লাখ আশ্রিতকে টিকা খাইয়ে বাংলাদেশ বহি:বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, নিজ দেশে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতেও কাজ করছে সরকার। তাই বিপন্ন রোহিঙ্গাদের আকড়ে ধরা নানা রোগ-বালাই তাড়াতে নানা রোগের টিকা খাওয়ানোর কার্যক্রম চলছে। মানবতার মা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত স্বাস্থ্যসহ মানবিক সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে সরকার।
মঙ্গলবার বিকেলে উখিয়ার থাইংখালীর জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিতদের জন্য কলেরা টিকা কর্মসূচীর উদ্বোধনকাল স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ৮টার দিকে উখিয়া ও টেকনাফের ১৬২টি কেন্দ্রে টিকা খাওয়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয়ের জন্য আসা রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যর ঝুঁকি কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয় তাদের কলেরা জনিত ডায়রিয়া রোগের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষ্যে প্রথম দফায় ৬লাখ ৫০হাজার রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্টীকে কলেরার টিকা খাওয়ানো শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় খাওয়ানো হবে ২লাখ ৫০হাজার জনকে। আরো কিছুদিন আগে হাম, যক্ষা, পলিওসহ অন্যান্য রোগের টিকা ও চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৯জন ‘এইডস’ রোগী সনাক্তের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কলেরা রোগ একটি মহামারি সংক্রামক রোগ। এই রোগ দেখা দিলে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই, আগে থেকেই এই রোগের টিকা কার্যত্রম শুরু করে সরকার।
মন্ত্রী আরো বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার মাঝে এখনো সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় কলেরা রোগ সৃষ্টি হতে পারে। আর কলেরা একবার সৃষ্টি হলে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যুহার বেড়ে যায়।
মন্ত্রী বলেন, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ও ক্যাম্পের আশপাশের ১ বছর থেকে সব বয়সীকে কলেরার টিকার আওতায় আনা হবে। নতুন পুরাতন সব মিয়ানমার নাগরিকরা এ টিকা পাবে। ৫ বছর ও তার নিচের শিশু-কিশোরদের দুই ডোজ এবং এর ঊর্ধ্ব বয়সীদের এক ডোজ করে কলেরা প্রতিষেধক টিকা খাওয়ানো হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদেয় সাড়ে ৬ লাখ ভ্যাকসিন (টিকা) রবিবার কক্সবাজার এসে পৌছে। প্রাথমিকভাবে উখিয়া-টেকনাফের সাড়ে ৬ লাখ টার্গেট করে মঙ্গলবার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২য় পর্যায়ে আড়াই লাখ জনগোষ্টীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। প্রাণভয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা সঙ্গে মারাত্মক সব সংক্রামক রোগও নিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে বলে খবর পেয়েছি। অপুষ্টিজনিত কারণে রোহিঙ্গারা সহজেই এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক সরকারি ২০টি এবং বেসরকারি ২৫টি মেডিকেল ক্যাম্প কাজ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মোবাইল টিমসহ সরকারিভাবে ৪০ জন ডাক্তার রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে লাখাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ চিকিৎসা পেয়েছে।
এসময় প্রতিন্ত্রীর সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় অধ্যাপক শায়েলা খাতুন, স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. এএম মজিবুল হক, কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম ও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, ঢাকার মহাখালী কলেরা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. তাজুল আসলাম বারী, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও রোগ প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।