সাইবার হামলায় এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ৯৯টি দেশের লক্ষাধিক কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রুশ সংবাদমাধ্যম রাশিয়া টুডে এ খবর জানিয়েছে।
ম্যালওয়্যারটেক ট্র্যাকার থেকে দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্বব্যাপী এ সাইবার হামলায় লক্ষাধিক কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি লেখার সময়ে ‘র্যানসমওয়্যারে’ আক্রান্ত কম্পিউটারের সংখ্যা দেখাচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ২৪৩টি।
রুশ বহুজাতিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি ল্যাব জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারের সংখ্যা এখনও বেড়ে চলেছে।
এর আগে নিরাপত্তা সফটওয়্যার নির্মাতা অ্যাভাস্ট জানিয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে আক্রান্ত কম্পিউটারের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ৯৯টি দেশে অন্তত ৭৫ হাজার কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে বলে তারা জানায়। যার মধ্যে বেশিরভাগ রাশিয়া, ইউক্রেন ও তাইওয়ান সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।
এই র্যানসমওয়্যার ভাইরাসের আক্রমণে কম্পিউটার লক (অচল) হয়ে যায় এবং মনিটরে একটি বার্তা ভেসে উঠে। এতে কম্পিউটার চালানোর জন্য ৩০০ থেকে ৬০০ ডলার চাঁদা দাবি করা হয়। অনলাইন মুদ্রা ব্যবস্থা বিটকয়েনে এই মুক্তিপণ পরিশোধ করার কথা বলা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্রাউডস্ট্রাইকের গবেষক এডাম মায়েরস জানিয়েছেন, ‘একবার এ ভাইরাস কোনও নেটওয়ার্কে কার্যকর হতে পারলে তা দ্রুত পুরো অবকাঠামোটিতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে আর কেউ আটকাতে পারে না।’
বিভিন্ন বেসরকারি সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা ‘ওয়ানাক্রাই’ নামের এক নতুন র্যানসমওয়্যার শনাক্ত করেছে। যা দ্রুত মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ‘র্যানসমওয়্যার’ হলো এমন এক ধরণের ম্যালওয়ার বা ভাইরাস, যা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীকে প্রবেশে বাধা দেয়। অনেক সময় হার্ডডিস্কের অংশ বা ফাইল পাসওয়ার্ড দিয়ে এনক্রিপ্ট করে দেয়। পরে ওই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ফেরত দেওয়ার জন্য মুক্তিপণ বা অর্থ দাবি করা হয়। ‘ট্রোজান’ ভাইরাসের মতোই এটি এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
শুক্রবার রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়সহ দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক, সেরব্যাংক সাইবার হামলার শিকার হয়। রুশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের প্রায় এক হাজার কম্পিউটার সাইবার হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশটির দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা জোরদার থাকায় ভাইরাস ব্যাংকের নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারেনি।
এবারের সাইবার হামলায় সবচেয়ে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা। প্রায় প্রতিটা হাসপাতালের কম্পিউটার, প্রিন্টার হামলার শিকার হয়। সাইবার হামলার পর দেশটির হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে রাখতে হয়। আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন প্রতিষ্ঠান ফেডএক্স কর্পোরেশনও মারাত্মকভাবে সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা দ্রুত এ সমস্যা কাটিয়ে উঠার কথা জানিয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।